'পুলার তিনডা বই লইতে পারছি'

‘খেড়, খেতা ও বাঁশ-খুঁটি দিইয়া জাইতে ধইরেও বানডা আটকাইতে পাইলুম না। কইটা জিনিসপত্র আস্তা ও সড়গে পাকমাইরে থুই (তাড়াতাড়ি করে রাখি)। ঘর থাইকা এক পুলার খালি তিনডা বই হাতে লইতে পারছি। এ সময় গরানের ডালান ছুইটে ঘরবাড়ি ও সগল কিছুই ভাসি নিল। ঘর থাইকা কোন্ডাও লইতে পারি নাই। কুলের পুলারে নিয়ে কোনো রহম জীবন নিইয়া পাড়ে আইছি।’ কথাগুলো জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার দুর্গম নাদাগাড়ী গ্রামের রিনা আক্তারের। বন্যায় সব খুইয়ে এখন আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের ওপর।

রিনার স্বামী রবিউল ইসলাম ফেরি করে কটকটি ও শনপাপড়ি বেচেন। চার ছেলের মধ্যে তিনজন স্কুলে পড়ে। এর মধ্যে এক ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী রিপন মিয়া। ১৪ আগস্ট যমুনা নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২০০ মিটার ভেঙে নাদাগাড়ী গ্রামের প্রায় ৫০টি ঘরবাড়ি পানির তোড়ে ভেসে যায়। পানির তোড়ে রিনা-রবিউলের ঘরটিও ভেসে যায়। আসবাবপত্র কিছুই বের করতে পারেননি তাঁরা। সাত দিন ধরে ভেঙে যাওয়া সেই বাঁধেরই একটি অংশে আশ্রয় নিয়েছেন। ছেলেদের সব পাঠ্যবই পানির সঙ্গে ভেসে যাওয়ায় তাদের লেখাপড়া নিয়ে রিনা খুব দুশ্চিন্তায় আছেন। সহায়-সম্বল ভেসে যাওয়ায় তাঁদের হাতে কোনো টাকাও নেই। খেয়ে না-খেয়ে খোলা আকাশের নিচে বাঁধের ওপর আছেন।

গত সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ভেঙে যাওয়া বাঁধের অংশটি বড় আকার ধারণ করেছে। সেখান দিয়ে এখনো স্রোত বইছে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সারা জেলার মধ্যে মাদারগঞ্জ উপজেলা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। অন্যদিকে মেলান্দহ, ইসলামপুরের ১০টি ইউনিয়ন, সদরের কিছু অংশ, দেওয়ানগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, বকশীগঞ্জসহ গোটা জেলায় ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪২ জন বন্যাকবলিত ছিল। পানি কমতে থাকায় মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে।

বাঁধে আশ্রয় নেওয়া ঘরহারা খাদিজা বেগম বলেন, ‘এমন পানির ধার জীবনে দেহিনি। ডালাও পানি সব তুলার মতো ভাসি নিল। কেউ কোনো জিনিসও বের হরতে পারেনি। শিকড়সহ বড় বড় গাছও ভেসে গেছে। এহন আমরা পথের ফকির। কিছুই নাই। বান্দের ওপর সাত দিন ধইরে পইড়ে আছি।’

মাদারগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বাঁধ ভেঙে সেখানে কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সাহায্য করা হবে।