রোহিঙ্গা বিষয়ে খালেদা জিয়ার মন্তব্য 'ইরেসপনসিবল'

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় ও সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তিনি দেশে নেই। বিদেশে বসে এ ধরনের বিষয়ে মন্তব্য করা, পর্যবেক্ষণ দেওয়া, বক্তব্য দেওয়া—এটা কোনো দেশপ্রেমী রাজনৈতিক দলের প্রধানের দায়িত্ব নয়। এটা ইরেসপনসিবল (দায়িত্বজ্ঞানহীন) মন্তব্য।’

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ষড়যন্ত্র আছে কি নেই, সেটা তো কার্যক্রমে বোঝা যায়। বেগম জিয়া দেশে নেই। তিনি কিছু বলবেন, দেশে এসে বলুন। তিনি বিদেশে বসে এ ধরনের সুইপিং রিমার্কস (অবিবেচনাপ্রসূত মন্তব্য) করবেন, সেটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’

মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এমনিতেই কক্সবাজার ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা। এর মধ্যে রোহিঙ্গাদের এত বেশিসংখ্যক উপস্থিতি আমাদের সামাজিকভাবেও একটা বিপর্যয় ঘটাতে পারে। এর সঙ্গে ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতিরও একটা সম্পর্ক থাকতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আগেও লক্ষ করেছি, ষড়যন্ত্রমূলক বিষয়গুলো সেটাও আমাদের আজকে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে।’

মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতিসংঘের যে অনুশাসন, সেই অনুশাসন অনুযায়ী এবং কফি আনানের তদন্তের সিদ্ধান্ত, সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে স্বদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশু ব্যবস্থা করার জন্য আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমার সরকারকে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ন্যায়ভিত্তিক-বাস্তবানুগ সমাধানের প্রতি আমরা স্ট্রেস (চাপ) দিচ্ছি, গুরুত্ব আরোপ করছি।’

সাংবাদিকদের একটি বিষয়ে অনুরোধ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা যখন এখানে, আমাদের ইন্টারনাল (অভ্যন্তরীণ) মিটিং করি, এই মিটিংয়ে আপনারা কিন্তু উপস্থিত থাকেন না। পরে এখন থেকে ওখানে একেকজন হয়তো কারও সঙ্গে কথা বললেন, তিনি হয়তো একটা কথা বললেন। এখানে উপস্থিত থেকে যেটা শুনবেন, ভালো সাংবাদিকদের এটাই তো নিয়ম, যা তাঁরা দেখবেন, যা তাঁরা শুনবেন, সেটাই লিখবেন। এটা তো আপনি দেখছেনও না, শুনছেনও না। কাজেই এ বিষয়টা, এ ধরনের নিউজগুলো অনেক সময় প্রবলেম (সমস্যা) সৃষ্টি করে।’ কাদের বলেন, ‘এতে আপনাদের সঙ্গে আমাদের একটা গ্যাপ সৃষ্টি করে। কারণ, আমরা জানি আমরা এখানে কী আলোচনা করেছি। দেখা যাচ্ছে যে ওটা ভিন্নভাবে-অন্য রকমভাবে পরের দিন মিডিয়ায় (গণমাধ্যমে) ছাপা হচ্ছে। এ বিষয়টায় আমি অনুরোধ করব, সাংবাদিকদের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে। ভালো সম্পর্ক আমরা রাখতে চাই।’

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেক বিষয় আছে ওপেন সিক্রেট, অপেক্ষা করুন। আমার মনে হয় অনেক কিছুই জানা যাবে, বোঝা যাবে।’

সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় দেশের বন্যা পরিস্থিতি ও বন্যাদুর্গত মানুষদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এবারের ঈদ আনন্দ বন্যাদুর্গত মানুষের সঙ্গে ভাগাভাগি করবেন দলের নেতা-কর্মীরা। সে জন্য সবাই ব্যয়সংকোচন করবেন। বন্যাদুর্গতদের পুনর্বাসন না করা পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা কার্যক্রম চলবে বলেও তিনি জানান।

এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর দলের সভানেত্রীর সভাপতিত্বে ওয়ার্কিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা এবং বন্যাদুর্গত মানুষের সমস্যা নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে। এ ছাড়া ৩০ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে কর্নেল ফারুক খানের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ১৯ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর চীন সফর করবে।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দীপু মনি, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।