মেয়াদ শেষেও নির্মাণ হয়নি, কাজ বন্ধ

সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দাতিয়াপাড়া ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র l ছবি: প্রথম আলো
সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দাতিয়াপাড়া ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র l ছবি: প্রথম আলো

নির্ধারিত সময়ের সাত মাসের বেশি সময় পেরোলেও সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দাতিয়াপাড়া মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের ভবন নির্মাণসহ উন্নয়নকাজ শেষ হয়নি। এ কারণে হাসপাতালটি চালু করা যাচ্ছে না।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ঠিকাদারির এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের গাফলতির কারণে যথাসময়ে ওই কেন্দ্রের কাজ শেষ হয়নি। সাত মাস ধরে কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে এখানকার মা ও শিশুদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকার মা-শিশুদের। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ এটি নির্মাণ এবং তদারকির কাজে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় কেন্দ্রটি চালু করা যাচ্ছে না।

বংশীকুণ্ডা গ্রামের গৃহিণী সাজেদা আহমেদ বলেন, এটি হাওরবেষ্টিত এলাকা। এখান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে চিকিৎসা নিতে মা ও শিশুদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। কেন্দ্রটি চালু হলে এ ভোগান্তি কমবে।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে ২০১৪ সালে জুনের প্রথম সপ্তাহে দাতিয়াপাড়া গ্রামে মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রটির ভবন, আবাসিক ভবন, গভীর নলকূপ স্থাপন, সংযোগ সড়ক ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ এবং উন্নয়নকাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ের এ কাজটি পায় সম্রাট এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদার ২০১৫ সালের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে কাজ শুরু করেন। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি।

বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদ বলেন, ‘ঠিকাদারের লোকজন যেনতেনভাবে ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করেছেন। ছয় মাস ধরে এ কাজ বন্ধ রয়েছে। আমি একদিনের জন্যও এখানে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোনো প্রকৌশলীকে আসতে দেখিনি। কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় কাজে নিম্নমানের কাঠ, ইট, পাথর ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় উত্থাপন করেছি।’

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দাতিয়াপাড়া গ্রামের সামনের সড়কের পূর্ব পাশে মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটির অবস্থান। এটির প্রবেশমুখের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজ অসম্পন্ন রয়েছে। ভবনের নিচে ফাঁকা অংশে পর্যাপ্ত মাটি ফেলা হয়নি। ভবনটির পূর্ব পাশের একটি অংশে দেয়াল নির্মাণ করা হয়নি। এ কারণে শাইলানী হাওরের পানি ভেতরে ঢুকে পড়েছে। ভবনের কিছু অংশে পলেস্তারার কাজ করা হয়নি।

জানতে চাইলে, ঠিকাদার মোয়াজ্জেম হোসেনের ব্যবসা অংশীদার পরিচয় দেওয়া শাহাদাত হোসেন বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। তবে নকশায় কিছু পরিবর্তন আনায় যথাসময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। এখন বর্ষাকাল। নির্মাণকাজের সময়সীমা ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে কাজ শুরু করে দ্রুত শেষ করা হবে।

জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মনিরুল হক বলেন, ‘আমি এটি দেখভাল করার দায়িত্ব পেয়েছি। কোনো কাজ অসমাপ্ত বা ত্রুটি থাকলে অবশ্যই তা করা হবে। তবে আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল নেই। ঠিকাদারের আবেদন আমরা পেয়েছি। কাজ শুরু করে তা দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলেছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন খন্দকার বলেন, ‘যেনতেনভাবে কাজ করা ও কাজ শেষ না করে ঠিকাদারের লোকজনের চলে যাওয়ার বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন। জেলা সমন্বয় কমিটির আগামী সভায় বিষয়টি উত্থাপন করব।’

জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে কেউ জানাননি। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’