গর্তে ভরা সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড় থেকে সদর উপজেলার উজানিসার পর্যন্ত অংশের বেহাল দশায় যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো
কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড় থেকে সদর উপজেলার উজানিসার পর্যন্ত অংশের বেহাল দশায় যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো

কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড় থেকে সদর উপজেলার উজানিসার পর্যন্ত অংশজুড়ে ভাঙাচোরা, ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ ও গর্ত তৈরি হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। এতে সড়কটিতে প্রায়ই তৈরি হয় যানজট। আর দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের।

এসব স্থানের কোথাও সড়ক দেবে গেছে, আবার কোথাও তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। প্রতিদিনই এসব ভাঙাচোরা, খানাখন্দ ও গর্তের পরিমাণ বেড়ে মহাসড়কের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। বৃষ্টির সময় গর্ত ও খানাখন্দে জমা পানিতে আর শুষ্ক সময়ে ধুলাবালির দুর্ভোগের মধ্য দিয়েই এ মহাসড়কে চলাচল করতে হয়।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড মোড় থেকে সদর উপজেলার উজানিসার সেতু এলাকা পর্যন্ত অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭ কিলোমিটার, প্রস্থ ১৮ ফুট।

সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে এই মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা অংশে সংস্কার ও মেরামতকাজ বাবদ সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ২০১৬ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। রাস্তাটি পাঁচ টনের বেশি ভারী যান চলার উপযোগী নয়, কিন্তু ৩০ থেকে ৪০ টন ওজনের যানও চলছে। অনেক পুরোনো এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৭-১৮ হাজার যান চলাচল করছে। 

পরিবহনশ্রমিক, বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরাইল বিশ্বরোড থেকে জেলা শহরের কুমারশীল মোড় বা কাউতলী মোড় পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার পথ যেতে ২০ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা লাগার কথা। কিন্তু লাগে এক ঘণ্টার বেশি সময়। বিশ্বরোড থেকে সদর উপজেলার উজানিসার—এই ২৭ কিলোমিটার পথ যেতে ৪০ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা লাগার কথা। কিন্তু এখানে লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। আর যানজট হলে তো কথাই নেই। সময়ের হিসাব তখন আর থাকে না।

জানা গেছে, ভারতের আগরতলা থেকে ঢাকামুখী বাস আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে। এ ছাড়া এটি দিয়ে কুমিল্লা থেকে সিলেটগামী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামগামী বাসও চলাচল করে। এ ছাড়া সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখী পাথর বহনকারী ট্রাকও এই সড়ক দিয়ে চলে।

গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের বিশ্বরোডের ছয়বাড়িয়া, নন্দনপুর বিসিক, নন্দনপুর বাজার, সুহিলপুর বাজার, ঘাটুরা পেট্রলপাম্প, পশ্চিম মেড্ডা পীরবাড়ি বাসস্ট্যান্ড, বিরাসার, ফুলবাড়িয়া, পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কজুড়েই ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। তবে ভাদুঘর বাসস্ট্যান্ড থেকে ভাদুঘর বড় হুজুরের বাড়ি পর্যন্ত সড়কের অংশের অবস্থা খুবই নাজুক। ভাদুঘর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ভাদঘুর সিএনজি পাম্প এবং বড় হুজুরের বাড়ি পর্যন্ত সড়কে পিচের (বিটুমিন) কোনো চিহ্ন নেই। সড়কের এই অংশের কোথাও কোথাও দেবে গেছে। এই অংশে যানবাহনের চালকেরা খুবই ধীরগতিতে যান চালাচ্ছেন। হেলেদুলে চলছে বাস, ট্রাকসহ সব ধরনের যান।

সিএনজিচালক তাপস মিয়া বলেন, ‘সারা রাস্তায় গর্ত আর ভাঙাচোরা। রাস্তা এই অবস্থার লাইগ্যা কোথাও যাত্রী নিয়ে যাইতে আগের তুলনায় অহন সময়ও বেশি লাগে। রোজগারও কম হয়।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইকবাল মিয়া বলেন, প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার পথে অনেক ঝাঁকুনি সহ্য করতে হচ্ছে। একবার গেলে দ্বিতীয়বার এই সড়ক দিয়ে যেতে ইচ্ছা করে না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু এহতেশাম সড়কটির বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ঈদমুখী যাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারে, সে জন্য সড়কের বিভিন্ন অংশে ইট, বালু, সুরকি ও মাটি ফেলে সংস্কার করা হয়েছে। শিগগিরই সড়কটি মেরামত করা হবে।