পুনর্বাসন ছাড়াই আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়ার নির্দেশ

পুনর্বাসন ছাড়াই রাঙামাটির বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত তিন শ পরিবারকে নিজেদের ভিটায় ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন। এর আগেই পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে হবে। স্থায়ী পুনর্বাসনের অপেক্ষায় থাকা পরিবারগুলো হঠাৎ এমন নির্দেশ পেয়ে দিশেহারা।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসন কার্যালয় প্রাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দিয়ে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, পুলিশ সুপার মো. সাঈদ তারিকুল হাসান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু সাহেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। ত্রাণ হিসেবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ৭৩ পরিবারকে ৬ হাজার টাকা, ২ বান্ডিল টিন ও ৩০ কেজি করে চাল এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ১১৮টি পরিবারকে ১ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।

ত্রাণ বিতরণ শেষে জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষে এত দীর্ঘ সময় ধরে আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সে জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষদের আজ (গতকাল মঙ্গলবার) থেকে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। আপনারা যেখানে যাবেন, নিরাপদ জায়গা দেখে ঘরবাড়ি বানাবেন। যেটুকু ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে সেইটুকু নিয়ে নিজেদের ভিটেমাটিতে চলে যাবেন, স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করবেন। একসঙ্গে এতগুলো মানুষ চলে যাওয়া সম্ভব নয়, সে জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা থাকবে। তারপর থেকে সব আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

গত ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড়ধসে রাঙামাটিতে ১২০ জন মানুষের মৃত্যু হয়। পাহাড়ধসের পর ঘরহারা হয়ে ১৯টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল ৩ হাজার ৪৯০ জন। গত তিন মাসে বেশির ভাগ পরিবার আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছে। তবে ৩০১ পরিবারের প্রায় সাড়ে ৭০০ জন এখনো ৬টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়ে গেছে। এই ৬টি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো হলো জিমনেশিয়াম, তবলছড়ির রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, স্টেডিয়াম, মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাস, রাঙাপানি এলাকার মোনঘর ভাবনাকেন্দ্র ও তবলছড়ি এনডিসির কোয়ার্টার। কাল বৃহস্পতিবার এই ৬ আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে।

আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষদের অভিযোগ, প্রশাসন দীর্ঘ তিন মাস ধরে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আশ্রিত লোকজনকে। পাহাড়ধসের ঘটনার পর প্রশাসনের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর থেকে নিজেদের উদ্যোগে লোকজনকে সরিয়ে এনেছে। কিন্তু এখন বলছে ওই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ফিরে যেতে।

রাঙামাটি শহরের জিমনেশিয়াম আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ভেদভেদীর শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা সুমেন্তা চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাড়িগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ১৩ জুন পাহাড়ধসে ঘর ভেঙে পড়েছে। আশ্রয় নেওয়ার প্রথম দিন থেকে বলা হয়েছে নিরাপদ স্থানে স্থায়ী পুনর্বাসন করা হবে। এখন পুনর্বাসন না করে শুধু এক হাজার টাকা ও ৩০ কেজি চাল দিয়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে। এ মুহূর্তে কোথায় যাব কিছু বুঝতে পারছি না।’

তবে নিরাপদ জায়গা পেলে ধীরে ধীরে পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আবু সাহেদ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের পুনর্বাসনের বিষয়টি একেবারে বাদ দেওয়া হয়নি। ভবিষ্যতে যদি নিরাপদ জায়গা পাওয়া যায়, তাহলে পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে। এ মুহূর্তে নিরাপদ জায়গা না পাওয়ায় এবং দীর্ঘদিন আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করা সম্ভব না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।