শিশুপার্কে, মাঠে খেলার পরিবেশ নেই

পুরান ঢাকার সিক্কাটুলী পুকুরে নৌকায় ঘুরছেন দর্শনার্থীরা l প্রথম আলো
পুরান ঢাকার সিক্কাটুলী পুকুরে নৌকায় ঘুরছেন দর্শনার্থীরা l প্রথম আলো

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঐতিহ্য সিক্কাটুলী শিশুপার্ক। কিন্তু পার্কটিতে শিশু-কিশোরদের আনন্দ-বিনোদনের জন্য কোনো রাইড নেই। এই পার্কের কয়েক শ মিটার পশ্চিমে আছে ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ মাঠ। এই মাঠেও খেলাধুলার পরিবেশ নেই। এ ছাড়া জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে মাজেদ সরদার কমিউনিটি সেন্টার ও মিরনজল্লা কাঁচাবাজার।

পুরান ঢাকার বংশাল রোড (হোল্ডিং নম্বর ১০৯-২০৭/১), আগা সাদেক লেন, আগামসিহ লেন, সিক্কাটুলী লেন, মাজেদ সরদার লেন, নেকী দেউড়ি, আব্দুল হাদী লেন, নবাব কাটারা, চানখাঁরপুল লেন, বিকে গাঙ্গুলি লেন, আবুল হাসনাত রোড, নিমতলী, সাত রওজা এলাকা নিয়ে এই ওয়ার্ড গঠিত। এই ওয়ার্ডে দেড় লক্ষাধিক লোকের বাস। ওয়ার্ডের সড়কে অবৈধ কাঁচাবাজার, গলিতে রিকশাজট, সড়কে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ও মাদকের উপদ্রব আছে। তবে এই ওয়ার্ডের আছে দৃষ্টিনন্দন ঐতিহ্যবাহী সিক্কাটুলী পুকুর। এই পুকুরে নৌকায় করে বেড়ানোর সুযোগও আছে। গতকাল বুধবার ডিএসসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

সিক্কাটুলী শিশুপার্ক

বংশালের সিক্কাটুলী লেনে রয়েছে সিক্কাটুলী শিশুপার্ক। পার্কটিতে আছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। পৃথক বেঞ্চে বসে আছে মহল্লার লোকজন। পার্কের ভেতর খেলাধুলা করছে শিশু-কিশোরেরা। কিন্তু পার্কটিতে কোনো রাইড নেই, বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। এই পার্কের পাশেই আছে সিক্কাটুলী পুকুর।

সিক্কাটুলী লেনের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, এই পার্ক পুরান ঢাকার অন্যতম ঐতিহ্য। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থায় পড়ে আছে। সংস্কারের জন্য সিটি করপোরেশন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এতে মহল্লার শিশু-কিশোরেরা আনন্দ-বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এই পার্কে ক্রিকেট খেলছিল মো. নয়ন ও রায়হান নামের দুই শিশু। তারা বলে, পার্কে রাইড না থাকায় প্রতিদিনই তারা ক্রিকেট খেলে। তাদের দলে মহল্লার অন্যান্য শিশু-কিশোরও যোগ দেয়।

সিক্কাটুলী পার্কে শিশুদের কোনো রাইড নেই। দীর্ঘদিন ধরে পার্কটি পড়ে আছে অযত্নে
সিক্কাটুলী পার্কে শিশুদের কোনো রাইড নেই। দীর্ঘদিন ধরে পার্কটি পড়ে আছে অযত্নে

বাংলাদেশ মাঠ

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন,স্বাধীনতার আগে এই মাঠটি ‘পাকিস্তান মাঠ’ হিসেবে পরিচিত ছিল। এই মাঠে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফুটবল ও ক্রিকেটে জাতীয় পর্যায় খেলেছে মহল্লার ছেলেরা। কিন্তু মাঠটি সংস্কার না করায় এখন খেলার কোনো পরিবেশ নেই। খেলাধুলার সময় বাতাসে ওড়ে ধুলাবালি।

বংশালের মাজেদ সরদার কমিউনিটি সেন্টার-সংলগ্ন এই মাঠের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে ইট-পাথরের টুকরো। উত্তর ও পূর্ব পাশে বসার স্থানসহ (গ্যালারি) চারপাশে ছড়িয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। তার মধ্যেই মহল্লার শিশুরা খেলতে নেমেছে। মাঠের উত্তর-পূর্ব পাশে বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাব। তবে ক্লাবের ভেতরে কাউকে দেখা যায়নি।

মাঠের এই অবস্থা থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মাঠে খেলতে আসা শিশু-কিশোরেরা। মোসাদ্দেক আলী নামে এক কিশোরের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় মাঠটি খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাঠে খেলার সময় বাতাসে উড়ছে ধুলাবালি। অবিলম্বে মাঠটি সংস্কার করা দরকার।

সড়কে কাঁচাবাজার

মাজেদ সরদার কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে পশ্চিম দিকে আগা সাদেক লেন পর্যন্ত সড়কের দুপাশ দখল করে বসছে অবৈধ কাঁচাবাজার। এর মধ্যে ইউসেফ মাজেদ সরদার স্কুলের সামনেও শাকসবজি ও মাছ-মাংস বিক্রি হচ্ছে। এসব দোকানের বর্জ্য সড়কে ছড়িয়ে আছে। সড়কের দুপাশে ড্রেনে ময়লা স্তূপ হয়ে আছে। বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এতে এই বিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা ব্যাহত হয় বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। অথচ দুই শ মিটার পূর্ব-উত্তর পাশেই আছে মিরন জল্লা কাঁচাবাজার।

এই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, কাঁচাবাজারের হইচইয়ে ক্লাসে পড়ার পরিবেশ নষ্ট হয়। বাজারের বর্জ্যের দুর্গন্ধে অনেক সময় শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানালাও বন্ধ রাখতে হয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এই বাজারের দোকানপাট খোলা থাকে। বাজারটি উচ্ছেদে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর বরাবর আবেদন করা হয়েছে, কিন্তু তিনি কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না।

জরাজীর্ণ কমিউনিটি সেন্টার

নাগরিকদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নব্বইয়ের দশকে নির্মাণ করা হয়েছিল মাজেদ সরকার কমিউনিটি সেন্টার। কিন্তু পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে এই কমিউনিটি সেন্টার ক্রমান্বয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। বর্তমানে দরিদ্র পরিবারের লোকজন এখানে অনুষ্ঠান করে। তবে গতকাল দুপুরে এই কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ দেখা গেছে।