আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ হলেও রয়ে গেলেন ১৯৮ জন

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই পাহাড়ধসে গৃহহীন হয়ে পড়া বেশির ভাগ মানুষ গতকাল বৃহস্পতিবার আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছে। তবে এখনো তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯৮ জন রয়ে গেছে। বিধ্বস্ত বাড়িঘরে বসবাসের পরিবেশ নেই বলেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যেতে পারেনি তারা।

মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাস আশ্রয়কেন্দ্রের রাবেয়া বেগম ও মো. আবদুল মালেক বলেন, শুধু ১ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা আর চাল নিয়ে কোথায় যাবেন তাঁরা? আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে গেলেও বিপদ, না গেলেও বিপদ। সরকার আগামীকাল (আজ) খাবার দেবে না। দেখা যাক আজ রাত কাটিয়ে কী হয়।

প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শহরে চালু থাকা ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজনকে গতকাল সন্ধ্যার মধ্যে চলে যেতে বলা হয়েছিল। নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল সকাল থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে গেছে অনেকে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শেষবারের মতো খাবার দেওয়া হয়। এরপর সন্ধ্যার মধ্যে তবলছড়ি এনডিসি হিল কোয়ার্টার, স্টেডিয়াম ও রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে সবাই চলে যায়। তবে জিমনেশিয়াম, মোনঘর ভাবনা কেন্দ্র ও রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে এখনো ৮৬টি পরিবারের ১৯৮ জন রয়ে গেছে।

জিমনেশিয়াম আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৮ পরিবারের ৪৮ জন, মোনঘর ভাবনা কেন্দ্রে ২ পরিবারের ৬ জন ও রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে ৪৬ পরিবারের ১৪৪ জন রয়ে গেছে।

সন্ধ্যায় স্টেডিয়াম আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়ার সময় কথা হয় মো. জিন্নাত আলীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শহরের শিমুলতলী এলাকায় তাঁর বাড়িটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এখন তাঁর সম্বল প্রশাসনের কাছ থেকে পাওয়া দুই বান্ডিল টিন ও ছয় হাজার টাকা। এই টাকা ও টিন দিয়ে কীভাবে নতুন করে ঘর তুলবেন, তা জানেন না তিনি।

এর আগে বিকেলে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু পরিবার সেখানে রয়ে গেছে। যাওয়ার জায়গা নেই বলে তারা সেখানেই থাকবে বলে জানায়। আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের একজন মো. সেলিম। তিনি বলেন, তাঁর বাড়িটি ধসে গেছে। সেখানে বসবাস করার কোনো পরিবেশ নেই। পরিবার নিয়ে কোথায় যাবেন বুঝতে পারছেন না। এ কারণে রয়ে গেছেন।

১৩ জুন পাহাড়ধসের পর ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল ৩ হাজার ৪৯০ জন। এরপর গত প্রায় তিন মাসে অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে চলে যায়। সর্বশেষ ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩০১ পরিবারের ৭৮৩ জন ছিল।

এ ব্যাপারে রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আবু শাহেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, যারা আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যায়নি, তাদের বিষয়ে প্রশাসন খোঁজখবর নিচ্ছে। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।