১২ কিলোমিটারই বেহাল

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম-বুড়িমারী স্থলবন্দর আঞ্চলিক সড়কের অধিকাংশ স্থানে কার্পেটিং উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। লতামারীছিট গ্রাম থেকে সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম-বুড়িমারী স্থলবন্দর আঞ্চলিক সড়কের অধিকাংশ স্থানে কার্পেটিং উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। লতামারীছিট গ্রাম থেকে সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

দীর্ঘদিন সংস্কারের মুখ দেখেনি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা সদর থেকে কাউয়ামারী বাজার হয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কটি। তাই কার্পেটিং উঠে খানাখন্দে ভরে গেছে রাস্তাটি। সড়কটির ১২ কিলোমিটারের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।

জানতে চাইলে এলজিইডির পাটগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী আবু তৈয়ব মো. শামসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। সেটি অনুমোদনের জন্য এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই সড়কটি মেরামতের কাজ শুরু হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পাটগ্রাম উপজেলা কার্যালয় সূত্র বলছে, পাটগ্রাম-বুড়িমারী স্থলবন্দর আঞ্চলিক সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৮ কিলোমিটার। প্রথম ধাপে ১৯৯৯ সালের দিকে এলজিইডির অর্থায়নে সড়কের পাটগ্রাম সদর থেকে কাউয়ামারী বাজার পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার কার্পেটিং করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০০২ সালের দিকে কাউয়ামারী বাজার থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর বাজার পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটার কার্পেটিং করা হয়।

উপজেলার শ্রীরামপুর ও বুড়িমারী ইউনিয়নের সব গ্রামের এবং পাটগ্রাম ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষকে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সব মিলিয়ে এলাকার শতাধিক গ্রামের ৯০ হাজারের বেশি মানুষ এই সড়কের ওপর নির্ভরশীল। পাশাপাশি কাউয়ামারী, কাঁঠালতলী, আউলিয়ারহাট ও ধরলা সেতুর মুখ নামে চারটি বাজার আছে এই সড়কের পাশে। তা ছাড়া শ্রীরামপুর ইউনিয়নের কামারেরহাট ও জালঙ্গিরহাটে বিজিবি ক্যাম্প থাকায় সড়কটির গুরুত্ব অত্যধিক। কিন্তু অতিবৃষ্টি ও প্রতিনিয়ত ভারী যানবাহন চলাচলের কারণেসড়কটি এখন বেহাল।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের লতামারী গ্রাম থেকে বুড়িমারী ইউনিয়নের বুড়িমারী স্থলবন্দর বাজার পর্যন্ত। গত মঙ্গলবার এই ১২ কিলোমিটার সড়কে দেখা যায়, বেশির ভাগ স্থানে কার্পেটিংয়ের অস্তিত্ব নেই। কোথাও কোথাও কার্পেটিংয়ের নিচের ইটের খোয়াও সরে গেছে। এতে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটিতে থাকা তিনটি সেতুর কাছেও সড়কে গর্ত হয়ে আছে। ভারী যানবাহন, ইজিবাইক, অটোরিকশা, ভ্যান, রিকশা সবই চলছে সড়কটিতে। তবে গর্তের কারণে ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে।

শ্রীরামপুর ইউনিয়নের লতামারী গ্রামের আবদুল লতিফ বলেন, তাঁদের উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য উপজেলা সদরের হাটবাজারে নিতে হয়। কিন্তু সড়কের এই অবস্থার কারণে এখন গাড়ি পাওয়াই দুষ্কর। পেলেও এর জন্য বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়।

বুড়িমারী ইউনিয়নের ভ্যানচালক আইজুল মিয়া বলেন, মাঝেমধ্যে গাড়ি ভেঙে যাওয়ায় বসে থাকতে হয়। কিন্তু পেটের দায়ে ভ্যান চালাতে হচ্ছে।

এদিকে উপজেলার কামারেরহাট ও জালঙ্গিরহাটে বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরাও সড়কটির দুরবস্থার কারণে কষ্টে রয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিবির কয়েকজন সদস্য বলেন, তাঁদের সীমান্ত ফাঁড়িতে যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। সীমান্তে কোনো ঘটনা ঘটলে এখন এই ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়েই যেতে হয়। এ কারণে সময়মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছানো যায় না।

শ্রীরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল হাশেম বলেন, এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে মানুষ প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। তাই সড়কটির বেহাল অবস্থার বিষয়টি ইতিমধ্যে উপজেলা সমন্বয় বৈঠকে তিনি উপস্থাপন করেছেন। তা ছাড়া এলজিইডির স্থানীয় প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এবং এলাকাবাসীর ভোগান্তির কথা চিন্তা করে তিনি সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান।