ভোলায় অবৈধ জাল দিয়ে অবাধে জাটকা নিধন

ভোলায় বিভিন্ন নদী ও সাগর মোহনা থেকে অবৈধ জাল দিয়ে জাটকা ধরে তা বিভিন্ন ঘাটে এনে বিক্রি করা হচ্ছে৷ ছবিটি গত মঙ্গলবার দৌলতখান উপজেলার পাতারখাল ঘাট থেকে তোলা l প্রথম আলো
ভোলায় বিভিন্ন নদী ও সাগর মোহনা থেকে অবৈধ জাল দিয়ে জাটকা ধরে তা বিভিন্ন ঘাটে এনে বিক্রি করা হচ্ছে৷ ছবিটি গত মঙ্গলবার দৌলতখান উপজেলার পাতারখাল ঘাট থেকে তোলা l প্রথম আলো

চলতি জাটকা সংরক্ষণ মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীসহ সাগর মোহনায় অবাধে জাটকা নিধন করা হচ্ছে৷ দিনে-রাতে অসংখ্য জেলে কারেন্ট জালসহ অবৈধ অন্যান্য জাল দিয়ে জাটকা শিকার করছেন৷
বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কিস্তি এবং মহাজনের দাদন পরিশোধের জন্য জেলেরা জাল নিয়ে নদীতে নামতে বাধ্য হচ্ছেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন৷
গত মঙ্গলববার বিকেলে ভোলার মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের জনতাবাজার মাছঘাটের পাশের খাল থেকে একটি মাছ ধরা নৌকাসহ প্রায় ২০০ মণ জাটকা জব্দ করেন হাতিয়া কোস্টগার্ডের সদস্যরা।
গত সোম ও মঙ্গলবার দৌলতখান উপজেলার পাতারখাল, চৌকিঘাটা মাঝিরহাট; সদর উপজেলার ভোলাখালের মাথা, রামদাসপুর, তুলাতলী, বিশ্বরোডের মাথা; বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর, লালমোহন উপজেলার বাত্তিরখাল ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক জেলে কারেন্ট জালসহ অন্যান্য অবৈধ জাল দিয়ে জাটকা শিকার করে এনে ঘাটে বিক্রি করছেন৷ প্রতিটি মাছঘাটে বর্ষাকালের মতো হাঁকডাক দিয়ে জাটকা কেনাবেচা চলছে৷ আড়তদারেরা জেলেদের মাছ কিনে নিচ্ছেন৷
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর নতুন ঘাটে মাছ বিক্রি করছিলেন মেঘনা নদীর মাঝি রিপন৷ ৪৫ হালি জাটকা (১৮০টি) তিনি সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেন৷ মাছ বিক্রির পর কথা হয় রিপনের সঙ্গে৷ তিনি বলেন, আইনের দোহাই দিয়ে অাড়তদার মাছের দাম কম দিচ্ছেন৷ এ কারণে মাছ বেিশ পেলেও তাঁরা ভালো দাম পাচ্ছেন না৷
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা ধরার ব্যাপারে জানতে চাইলে রিপন বলেন, ‘এসুম নদীতে স্রোত নাই, বেিশ দামের সুতার জাল কিননা পাতলে মাছ পাওন যায় না, আর মাছ না পাইলে আমার নৌকার আট জাইল্যার পরিবার না খাইয়া থাকপো৷ মহাজনের দাদন আছে ৭০ হাজার; কারেন্ট জালে জাটকা না ধরলে জাল সব লইয়া যাইব মহাজন, হেসুম কী করুম আমনেই কন৷’ সদর উপজেলার ভোলা খালের মাথার জেলে রফিক বলেন, ‘মহাজনের দাদন আর এনজিওর কিস্তি শোধ দেওনের লাইগ্যা আমগো নদীত যাইতে অয়৷’
রিপনের মতো একই কথা বলেন ভোলা সদর উপজেলার রামদাসপুরের জেলে অকিলউদ্দিন, লালমোহনের বাত্তির খাল ঘাটের জসিমউদ্দিন, চরফ্যাশনের বেতুয়া খালের রফিকুল ইসলাম ও বোরহানউদ্দিন গঙ্গাপুর ঘাটের জেলে আসমত আলী৷ দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর নতুন ঘাটের মত্স্য ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান বলেন, জেলেরা দাদনের চাপে নয়, এনজিওর কিস্তির চাপে নদীতে যেতে বাধ্য হন৷
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রীতিশ কুমার মলিÐবলেন, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ মৌসুম৷ এ সময় জাটকা শিকার, বহন এবং কেনাবেচা নিষিদ্ধ৷ এরই মধ্যে ভোলার প্রতিটি হাটে-বাজারে ও ঘাটগুলোতে জাটকা সংরক্ষণে প্রচার-প্রচারণা এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে৷ কোস্টগার্ডের স্টাফ অফিসার (প্ল্যান) লে. এ এম রাহাতুজ্জামান বলেন, জাটকা নিধন বন্ধে নভেম্বর থেকেই বিগত সময়ের চেয়ে জলসীমানায় এবং মাছ বহনের পথগুলোতে তাঁরা বেশি অভিযান চালাচ্ছেন৷ এ পর্যন্ত তাঁরা ৩০ হাজার কেজি জাটকা ও এক কোটি ৭৬ লাখ মিটার কারেন্ট জাল আটক করেছেন৷
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘নদীতে অভিযান কম হচ্ছে দেখে জেলার এসপি ও কোস্টগার্ডের আঞ্চলিক কমান্ডারকে নিয়ে বৈঠকে বসেছি৷ অভিযান আরও জোরদার করা হবে৷’