আত্মপ্রত্যয়ী যুবক আবু সায়াদ আহমেদ

নিজের পুকুরে মাছ চাষ তদারকি করছেন ঘোড়াঘাটের আবু সায়াদ l ছবি: প্রথম আলো
নিজের পুকুরে মাছ চাষ তদারকি করছেন ঘোড়াঘাটের আবু সায়াদ l ছবি: প্রথম আলো

কাজী মাহবুবার রহমান মো. আবু সায়াদ আহমেদ চৌধুরী (৩৫) বছর। বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের চৌধুরী গোপালপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের কাজী শামছুল হুদা চৌধুরী ও হাসিনা বেগমের আট ছেলেমেয়ের মধ্যে সপ্তম।

আবু সায়াদ আত্মপ্রত্যয়ী যুবক। তিনি অন্য ভাইবোনদের পথে না গিয়ে এলাকার যুব সমাজকে অধঃপতন থেকে রক্ষা ও সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ভুলে কিছু করার দিকে অগ্রসর হন। ২০০০ সালে এইচএসসি পাস করেই তিনি মাছ চাষ, বিষমুক্ত সবজি খামারসহ বিভিন্ন ধরনের আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকাণ্ড, বাল্যবিবাহ, মাদক প্রতিরোধ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। গত বছর তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জাতীয় যুব পুরস্কার পান। এ ছাড়া তিনি স্বল্পদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হন।

আবু সায়াদ বলেন, এলাকায় যুবকদের মাঝে মাদকের বিস্তার, বাল্যবিবাহসহ সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে ২০০০ সালে এলাকার যুবকদের নিয়ে নিজ বাড়ির সামনে ২৫ জন যুবক-যুবতীকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘প্রজন্ম যুব উন্নয়ন সংগঠন’। সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় মাদক ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের পাশাপাশি এসব বন্ধে সচেতনতামূলক নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। পরে তিনি ২০০২ সালে যুব উন্নয়ন থেকে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিন বছরের জন্য এলাকায় ২৫ শতাংশের একটি পুকুর ইজারা নিয়ে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ চাষ শুরু করেন। এতে প্রায় আট হাজার টাকা খরচ হয়। ৬ মাস পর সেই মাছ ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। পরে তিন বছরের জন্য চারটি পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। এ ছাড়া নিজের জমিতে আরও চারটি পুকুর খনন করেন। এরপর একে একে গড়ে তোলেন ১২টি গাভীর একটি ডেইরি ফার্ম, পাঁচ হাজার মুরগির দুটি পোলট্রি ফার্ম, দেড় বিঘার একটি নারকেল-বাগান, থাই পেয়ারা ও মাল্টা বাগান, নেপিয়ার ঘাসখেত, বিষমুক্ত সবজি-বাগান। এসব পুকুর, খামার ও বাগান থেকে তিনি প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় করছেন। এসব স্থানে কর্মসংস্থান হয়েছে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির। এসব কর্মকাণ্ডে সফলতার জন্য তিনি গত বছর প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জাতীয় যুব পুরস্কার পান।

এদিকে মাদক ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের নাটিকা প্রদর্শনের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে জড়িয়ে পড়েন। ২০১০ সালে তিনি নির্মাণ করেন শিশুতোষ চলচ্চিত্র দ্য ভিঞ্চি অ্যাগেইন। ২০১১ সালে শিশুতোষ চলচ্চিত্র উৎসবে এটি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া রাজশাহী বরেন্দ্র থিয়েটার থেকে দ্বিতীয় পুরস্কার লাভ করেন।

আবু সায়াদ বলেন, তাঁর আয়ের একটি বড় অংশ তিনি ব্যয় করছেন মাদক ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে। এ লক্ষ্যে প্রতিবছর মাদকবিরোধী ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এবং বিভিন্ন ধরনের সচেতনমূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছেন।

উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, আবু সায়াদের সাফল্য অনেক যুবককে আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করছে। ইউএনও টি এম এ মোমিন বলেন, আবু সায়াদের কর্মকাণ্ড এলাকায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।