সেই বাবর আর এই বাবর

লুত্ফুজ্জামান বাবর
লুত্ফুজ্জামান বাবর

চোখে সোনালি রঙের রোদচশমা, পরনে সাদা পাঞ্জাবি। হাতে একটি রকেট লঞ্চার। নেড়েচেড়ে দেখছেন আর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে বিশাল অস্ত্রের চালান আটক হওয়ার পর তা দেখতে পরদিন চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনস মাঠে যান তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। এ সময় এ রকম একটি ছবি তোলা হয়, এটি গণমাধ্যমে বহুবার ছাপা হয়েছে। এই ছবি তোলার কিছুক্ষণ পরই আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লুৎফুজ্জামান বাবর মন্তব্য করেন, এই অস্ত্র আনার সঙ্গে বিরোধী দল আওয়ামী লীগের যোগসূত্র থাকতে পারে। এখন আদালতে প্রমাণিত হয়েছে, আওয়ামী লীগ নয়, তিনি নিজেই এর সঙ্গে জড়িত। গতকাল দেওয়া আদালতের রায়ে বাবরসহ ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিলের দেওয়া ৩০ এপ্রিলের ডেডলাইন নিয়ে তখন রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল উত্তপ্ত। এর মধ্যেই ১ এপ্রিল গভীর রাতে অস্ত্র ধরা পড়ে। ২ এপ্রিল ঢাকা থেকে উড়ে চট্টগ্রামে যান প্রতিমন্ত্রী বাবর। সঙ্গে পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক শহুদুল হক, নবগঠিত র‌্যাবের প্রধান আনোয়ারুল ইকবাল।
বিকেলে পুলিশ লাইনে ১৫ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহারের জন্য এসব অবৈধ অস্ত্র আনা হয়েছে। এটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। যারা এই অস্ত্র এনেছে, তারা দেশের শত্রু। উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো অত্যাধুনিক, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাবর বলেছিলেন, বিরোধী দল ৩০ এপ্রিল সরকার হটানোর যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে, তার সঙ্গে এই অস্ত্র উদ্ধারের যোগসূত্রের ব্যাপারটি উড়িয়ে দেওয়া যায় না (সূত্র: প্রথম আলো, ৩ এপ্রিল, ২০০৪)। তাঁর এই মন্তব্যের পর বিএনপির নেতারা এসব অস্ত্র আনার জন্য আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত করে বক্তব্য-বিবৃতি দিতে থাকেন।
কিন্তু শুরু থেকেই এই অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়াগুলো চালাতে পুলিশ কর্মকর্তাদের অনীহা ছিল। অস্ত্র আটকের ৩৬ ঘণ্টা পর কারও নাম উল্লেখ না করে কর্ণফুলী থানায় দুটি মামলা করে পুলিশ। মামলার এজাহারে অস্ত্র বহনকারী মাছ ধরার নৌকা এমভি খাজার দান ও এমভি আমানতের মালিক, সারেং ও কর্মচারী এবং পাঁচটি ট্রাকের চালককে আসামি করার কথা উল্লেখ করা হয়। এই মামলার তদন্তে গাফিলতি ও অনীহা নিয়ে গণমাধ্যমগুলো সরব হলেও সরকারের কোনো গা ছিল না।
১১ এপ্রিল আওয়ামী লীগের একটি সংসদীয় দল সিইউএফএল পরিদর্শনে গেলে তাদের সেখানে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। ওই সংসদীয় দলের নেতা তৎকালীন সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা আবদুল হামিদ (বর্তমানে রাষ্ট্রপতি) তখন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনা তদন্তের জন্য এসে তাঁরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। তাঁদের ন্যূনতম সৌজন্যও দেখাননি পুলিশ ও সিইউএফএলের কর্মকর্তারা (সূত্র: প্রথম আলো, ১২ এপ্রিল, ২০০৪)।