রাবার বাঁধের ভেতর পানি কম

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার কণ্ঠিনালা নদীর রাবার বাঁধের ভেতর পর্যাপ্ত পানি না থাকায় বোরো ধানের ভরা মৌসুমে সেচ নিয়ে সংকটে পড়েছেন কৃষকেরা। জুড়ী নদীতে অস্থায়ী মাটির বাঁধ স্থাপন না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে বোরো ও রবিশস্য আবাদ এবং বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিনিষ্কাশনের সুবিধার্থে এলজিইডির উদ্যোগে ২০০৬ সালের দিকে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের সোনাপুর এলাকায় জুড়ী নদীর শাখা কণ্ঠিনালা নদীর শেষ প্রান্তে রাবার বাঁধ স্থাপন করা হয়। বাঁধটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৫ মিটার। পরে উপকারভোগীদের নিয়ে গঠন করা হয় রাবার বাঁধ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড। বাঁধটির আওতায় উপজেলার হাকালুকি হাওরপারের প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর ধানের জমিতে সেচসুবিধা পাওয়া যায়।

এলাকার অনেকে জানান, কণ্ঠিনালা নদীর সঙ্গে ছোট-বড় ১০-১২টি খাল যুক্ত রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে নদীতে পানি আটকে রাখতে রাবার বাঁধ ফুলিয়ে উঁচু করা হয়। একই সঙ্গে জুড়ী নদীর ভাটিতে অস্থায়ী মাটির বাঁধ স্থাপন করা হয়। এতে রাবার বাঁধের ভেতর পানি জমা হয়। তখন দুটি নদীর সঙ্গে যুক্ত খালগুলো দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে কৃষকেরা সেচসুবিধা পান। বাঁধ ফোলানো ও মাটির বাঁধ স্থাপনের কাজটি করে রাবার বাঁধ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। কিন্তু এবার বোরো মৌসুম শুরু হলেও কণ্ঠিনালায় পর্যাপ্ত পানি নেই। খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। মাটির বাঁধ স্থাপন না করায় জুড়ী নদীর এক পাশ দিয়ে পানি নেমে যাচ্ছে।

 ২৭ জানুয়ারি দুপুরে উপজেলার বেলাগাঁও, গোবিন্দপুর, শাহপুর ও জায়ফরনগর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বোরো ধানের জমি শুকিয়ে গেছে।

সেচসুবিধা না পাওয়ায় কৃষকেরা উদ্বিগ্ন। বেলাগাঁওয়ের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান তিন একর জমিতে এবার বোরো ধানের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, জুড়ী নদীতে বাঁধ না দেওয়ায় কণ্ঠিনালায় পানি নেই। খেত নষ্ট হচ্ছে। একই গ্রামের শফিক মিয়া বলেন, ‘সাত কিয়ার (বিঘা) জমিনে খেত করছি। এক কিয়ারে করতে দুই হাজার টেখা (টাকা) খরচ অয়। সেচর লাগি ফসল রক্ষা করা যাইবনি—এইটাই চিন্তা।’

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল জলিল জানান, এবার উপজেলার পাঁচ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। সেচসংকটের সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, সময়মতো অস্থায়ী মাটির বাঁধ নির্মিত হলে কৃষকদের এ দুর্ভোগে পড়তে হতো না।

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুল আজম জানান, চলতি অর্থবছরে জুড়ী নদীর হিনাইনঘাট এলাকায় একটি জলকপাট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি হলে অস্থায়ী মাটির বাঁধের দরকার পড়বে না। সেচের অভাবে কৃষকদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।