এ যেন সর্ষের ভেতর ভূত!

ভৈরব সার্কেলের পরিদর্শক কামনাশিষ সরকারকে গ্রেপ্তার করে ভৈরব থানা-পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। ছবি: সুমন মোল্লা
ভৈরব সার্কেলের পরিদর্শক কামনাশিষ সরকারকে গ্রেপ্তার করে ভৈরব থানা-পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। ছবি: সুমন মোল্লা

৬৮ কেজি গাজা ও ২৪ বোতল ফেনসিডিল রাখার অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভৈরব সার্কেলের পরিদর্শক কামনাশিষ সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় কামনাশিষকে তাঁর কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করেন অধিদপ্তরের কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রাতে তাঁকে ভৈরব থানা-পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।

অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভৈরব, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, কটিয়াদী, নিকলী এবং অষ্টগ্রাম উপজেলা নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভৈরব সার্কেল কার্যালয়। কামনাশিষ চলতি বছরের ১ মার্চ ভৈরব সার্কেলের পরিদর্শক হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনে কর্মরত ছিলেন। ভৈরবে যোগ দেওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার হওয়া মাদকদ্রব্যের সবটা মামলার সিজার লিস্টে অন্তর্ভুক্ত না করে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠে।

গোয়েন্দা অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর আজ শনিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন ভৈরব সার্কেল কার্যালয় তল্লাশি করতে যান। পরিচয় পাওয়ার পর এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চেনার পরও কামনাশিষ তাঁদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলেন না। পরে ভৈরব সার্কেলের অন্য কর্মীদের সহযোগিতা নিয়ে কিশোরগঞ্জ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ভেতরে প্রবেশ করেন। তল্লাশির একপর্যায়ে পরিদর্শকের কার্যালয়ের সঙ্গে লাগোয়া কক্ষটিতে ৬৮ কেজি গাঁজা ও ২৪ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া যায়। ওই মাদকদ্রব্য কোন অভিযান থেকে উদ্ধার হয়েছে পরিদর্শক তা বলতে পারছিলেন না। মাদকদ্রব্য পাওয়ার পর কামনাশিষ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং আসবাব ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। তাঁর হাতে ছুরি ছিল। গ্রেপ্তার করা হলে তিনি ওই ছুরি দিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলেও হুমকি দেন। এ অবস্থায় সহকারী পরিচালক সাহায্য চেয়ে ভৈরব থানায় ফোন দেন। এরপর ভৈরব থানা থেকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য গিয়ে অভিযানে যোগ দেন। পরে কামনাশিষের হাতে হাতকড়া পরিয়ে ভৈরব থানায় আনা হয়।

ভৈরব থানা হেফাজতে থাকাকালে পরিদর্শক কামনাশিষ প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ম মেনেই তিনি চাকরি করে আসছেন। কীভাবে তাঁর কার্যালয়ে মাদকদ্রব্য এল তা তিনি নিজেও জানেন না। তিনি বলেন, ‘আমার কার্যালয়ে আমি ছাড়াও আরো কয়েকজন আছেন। সুতরাং আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারি।’

কামনাশিষ দাবি করেন, ‘সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন আগের দিন শুক্রবার ভৈরব আসেন। ওই দিন অফিস তল্লাশি করে তিনি মাদকদ্রব্য পান। এরপর বিশেষ কিছু না বলে তিনি ওই মাদকদ্রব্য আমার জিম্মায় রেখে দিতে বলেন। আজ আবার অভিযান চালিয়ে তিনি আমাকে গ্রেপ্তার করেন।’ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষিপ্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিনি (সহকারী পরিচালক) আমার শরীরে হাত তোলেন। মারধর করেন। আমি শুধু ওই অংশটুকুর প্রতিবাদ করেছিলাম।’

সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কামনাশিষের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে মাদকদ্রব্য রাখার অভিযোগ আগেও ছিল। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর আজ আমরা অভিযান চালিয়ে ৬৮ কেজি গাঁজা ও ২৪ বোতল ফেনসিডিল তাঁর কার্যালয় থেকে পাই। আইনগতভাবে কার্যালয়ে মাদকদ্রব্য রাখার সুযোগ নেই। যেহেতু পরিদর্শক সার্কেল প্রধান, সেই কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।’ আগের দিন অভিযান চালানোর কথা অস্বীকার করেন আনোয়ার হোসেন।

এ ঘটনায় সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে কামনাশিষকে আসামি করে মামলা করেছেন।

মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফোন করে পুলিশের সাহায্য চাইলে আমরা তাঁকে সাহায্য করি।’