মাল্টার সঙ্গী আগাম টক বরই

আগাম টক বরই গাছের বাগান পরিচর্যা করছেন মোসলেম উদ্দিন। গত বুধবারের ছবি l প্রথম আলো
আগাম টক বরই গাছের বাগান পরিচর্যা করছেন মোসলেম উদ্দিন। গত বুধবারের ছবি l প্রথম আলো

সাড়ে ৪ একর উঁচু জমি। ওই জমিতে বছর দুয়েক আগে ৮৫০টি টক বরই এবং ৮৫০টি মাল্টার কলমের চারা লাগিয়েছেন। প্রতি সারিতে একটি করে টক বরই আর একটি করে মাল্টাগাছ লাগানো হয়েছে। মাল্টার ফলনের সময় ফুরিয়েছে মাস তিনেক আগেই। এবার ওই বাগানের ১০টি মাল্টাগাছে প্রথম ফল ধরেছিল। এখন ওই বাগানের ৮৫০টি গাছে টক বরই ধরেছে। তা-ও আবার আগাম। চাষি মোসলেম এক সপ্তাহ ধরে টক বরই বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন। আগাম হওয়ায় এখন বাজারে এক কেজি টক বরই বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। এক মাস পরই এক কেজির দাম হবে ১০ থেকে ১৫ টাকা। সফল চাষি মোসলেম এবার আগাম টক বরই বিক্রি করবেন প্রায় দুই টন। এবার বরই বেচে প্রায় দুই লাখ টাকা পাবেন তিনি। একসঙ্গে দুটি ফলের বাগান করে উপজেলার অন্যান্য চাষিকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ওই বাগানে গেলে মনে হয় ‘মাল্টার সঙ্গী টক বরই’।

মোসলেম বললেন, মাল্টাই হবে এ বাগানের প্রধান ফলের গাছ। আগাম টক বরই থাকবে মাত্র পাঁচ বছর। পাঁচ বছর পর মাল্টাগাছ প্রসারিত হবে। তখন বরইগাছ সমূলে কেটে ফেলা হবে। মোসলেমের বিশ্বাস, আগামী পাঁচ বছরে শুধু আগাম টক বরই বিক্রি করে ৫০ লাখ টাকা আয় করবেন।

উপজেলার কীর্ত্তনখোলা গ্রামের জয়েন উদ্দিনের ছেলে মোসলেম উদ্দিন চার বছর ধরে ৯ একর জমিতে বিচিবিহীন লেবু চাষ করে পুরো টাঙ্গাইল জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। ২০১৬ সালে জেলার সেরা লেবুচাষি হিসেবে তিনি স্বীকৃতি পান।

গত বুধবার মোসলেমের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, মাল্টাগাছের ফাঁকে ফাঁকে লাগানো টক বরইগাছে প্রচুর বরই ধরেছে। তিনজন কর্মচারী বাগানের পরিচর্যা করছেন। বাগানে বসে আগাম টক বরই চাষ প্রসঙ্গে এই প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, ‘আমার এক আত্মীয়ের একটি টক বরইগাছ আছে। অন্যান্য বরইয়ের আগে এই বরই গাছে ধরে। ভাবলাম, ওই গাছ থেকে কলম করে বড় একটা বাগান করব। এভাবে দুই বছর চেষ্টা করে ৮৫০টি কলমের চারা তৈরি করেছি। এ বছরই আমার কলম করা বরইগাছে প্রথম ফলন এল। এ বরই আমারই সৃষ্টি।’

মোসলেম আরও বলেন, ‘দুই বছর আগে যখন মাল্টা ও বরইয়ের ছোট চারা লাগিয়েছিলাম, তখন আমি ওই বাগানের জমিতে কলাই চাষ করেছিলাম। ৪০ হাজার টাকার কলাই বিক্রি করেছিলাম।’

উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোসলেম ২০১৬ সালে জেলার সেরা লেবুচাষি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তিনি আমার ইউনিয়নের গর্ব।’

সখীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফায়জুল ইসলাম ভুঁইয়া বললেন, ‘কৃষি বিভাগের বড় কর্মকর্তারা সখীপুরে এলেই আমরা মোসলেমের লেবুবাগানে নিয়ে যাই। এবার মোসলেম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আগাম টক বরই চাষ করেছেন। ওই বাগানে আবার বারি-১ জাতের মাল্টার চাষও করেছেন। প্রকৃত অর্থেই মোসলেম একজন সফল চাষি।’