পুরোনো চেহারায় ছাত্রলীগ, অস্বস্তি আওয়ামী লীগে

নতুন সরকার গঠনের পরপর ছাত্রলীগ আবার পুরোনো চেহারায় আবির্ভূত হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। দলটির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা ও মন্ত্রীর মতে, এখনই ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরা না হলে ভবিষ্যতে সরকারকে আরও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।
ছাত্রলীগের বেপরোয়া তৎপরতা নিয়ে আলাপকালে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ও মন্ত্রী গতকাল প্রথম আলোর কাছে তাঁদের অস্বস্তির কথা জানান। তাঁরা গত রোববার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এসব নেতা ও মন্ত্রী এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, যাঁরা প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে হামলা করেছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এখানে শিথিলতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। তাহলে সরকার সম্পর্কে মানুষের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাবে।
আরেকজন নেতা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। আগে ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কথা বলে অনেকের বিরাগভাজন হয়েছি।’
অবশ্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপরাধী যে দলেরই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘তাঁদের (হামলাকারীদের) ধরার জন্য পুলিশ সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে। এর আগে বিশ্বজিতের ঘটনায় আমাদের মাথা নিচু হয়ে গিয়েছিল, এখন এ ঘটনায় আমাদের নাক-কান কাটা গেল।’
তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ-ও বলেছেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আসছে এ ঘটনায় জামায়াত-শিবিরও যুক্ত হয়ে গোলমালের চেষ্টা করেছে। ছাত্রলীগের মিছিলের সময় পেছন থেকে ককটেল ফুটিয়েছিল। এরপরই তারা চড়াও হয়। তবে তদন্তে যে-ই দোষী হবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। পুলিশের মহাপরিদর্শককেও (আইজিপি) প্রধানমন্ত্রী ডেকে পাঠান। তবে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এটাও দাবি করছেন যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নামে ওই দিন ছাত্রশিবির মিছিল ও সমাবেশ করে। হামলার ঘটনাও পরিকল্পিত।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি ছাত্রলীগেরও সমর্থন ছিল। কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ায় গত রোববার ছাত্রলীগ একটি আনন্দ মিছিল বের করে। কিন্তু মিছিলের পেছনে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা হামলা চালান। তিনি জানান, এ ঘটনায় যাঁদের ছবি পত্রিকায় এসেছে, তদন্ত সাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইজিপিকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ছাড়া ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ছাত্রলীগও একটি তদন্ত কমিটি করেছে।
শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের এ হামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আমি দুঃখিত, উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। এ বিষয়ে তদন্তে যে-ই দায়ী হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘এই আন্দোলনে শিবিরও যুক্ত হয়ে গোলমালের চেষ্টা করেছে।’
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে বিভিন্ন সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সাধারণ মানুষের ওপর ছাত্রশিবির হামলা করেছিল। কিন্তু তখন ছাত্রশিবিরের হামলা প্রতিরোধে ছাত্রলীগের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এখন নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর আবার আগের মতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।