'প্রশাসন চাইলে এক দিনে চাঁদাবাজি বন্ধ'

পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য বগুড়া। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা বাস, ট্রাক ও অটোরিকশা থেকে বছরে ৮০ কোটি টাকা চাঁদা তোলেন। এই জেলার বড় সব অপরাধের গোড়াতেও রয়েছে এই চাঁদাবাজি  এই নৈরাজ্য বন্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটা জানতে প্রথম আলো ফেসবুকের পক্ষ থেকে পাঠকের মতামত চাওয়া হয়েছিল। অনেক পাঠক তাঁদের মূল্যবান পরামর্শ আমাদের জানিয়েছেন।

পাঠক এস আর পিয়াস খান বলেন, ‘প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে। প্রশাসন চাইলে এক দিনের ভেতর এসব চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। প্রশাসন চাইলে সব সম্ভব।’

কেউ কেউ জানিয়েছেন, সমস্যাটি শুধু বগুড়া জেলার নয়, বরং বাংলাদেশের অনেক জেলায় চলছে এমন চাঁদাবাজি। রিয়াজ উদ্দিন লিখেছেন, ‘বগুড়া ছাড়াও দেশের ৬৩ জেলায় ক্ষমতাসীন দলের নেতানেত্রীরাই চাঁদাবাজি করে আসছেন।’

এ আর মাজেদুর রহমান লিখেছেন, ‘এই চাঁদাবাজির বড় শিকার নওগাঁ জেলা। আপনারা জানেন নওগাঁ বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চাল উৎপাদনকারী জেলা। নওগাঁ জেলা থেকে প্রতিদিনই শত শত ট্রাক চাল দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়। সবজি, মাছ থেকে অনেক কিছুই নওগাঁর বাইরে পাঠাতে হয়। বগুড়া ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ নেই। এমনকি যাত্রী পরিবহনও এই চাঁদাবাজির বাইরে নয়। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই নওগাঁর পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে বগুড়ার চাঁদাবাজদের সমস্যা লেগেই আছে। অনেকটা নিরুপায় হয়েই আমাদের নওগাঁর মানুষদের এই চাঁদাবাজদের মেনে নিতে হয়।’ তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, ‘আমার মনে হয় এই কাজটা সম্পূর্ণ দলীয় ছত্রচ্ছায়ায় চলে। প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপও প্রয়োজন।’

খায়ের খান লিখেছেন, ‘আমাদের কুমিল্লার চান্দিনা লোকাল স্টেশনগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলে নিচ্ছে চাঁদাবাজেরা। কোনো কোনো সময় ড্রাইভারদের না খেয়ে থাকতে হয়, কিন্তু ওদের চাঁদা দিতে হয়।’

দলীয়ভাবে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন নাজিম উদ্দিন। তিনি লিখেছেন, ‘সারা দেশে বিভিন্ন লীগের কিছু অসৎ লোকের ক্ষমতার বাড়াবাড়ি, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, ধর্ষণ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে মানুষ অসহায়। আর কেউ কেউ অন্যায়, অবৈধভাবে টাকার পাহাড় গড়ছে। অথচ কোনো জবাবদিহি নেই! মনে হয় দল এবং আইন এদের কাছে অসহায়। এদের ব্যাপারে দলের উচিত কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। এরা আগামী নির্বাচনে দলের জন্য ভয়ংকর ক্ষতির কারণ হতে পারে।’

সরকারকেই কঠোর হতে হবে মনে করেন জুলকার নাইন। তিনি লিখেছেন, ‘এখানে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। চাঁদাবাজ যে দলেরই হোক, তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় রাজনৈতিক শক্তি তাকে যেন আশ্রয় না দেয়, তা নিশ্চিত করতে পারলে এটা কমে যাবে।’

গণমাধ্যমকে আরও সক্রিয় হতে হবে মনে করেন নিয়ামুল ইসলাম ও মো. তাজুল ইসলাম। নিয়ামুল লিখেছেন, ‘যে দলের নেতাই হোক, চাঁদাবাজি করার অধিকার তাঁর নেই। এ জন্য প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। আর প্রথম আলোকেও ভয়ভীতি দূর করে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে লিখে যেতে হবে।’ মো. তাজুল ইসলামের পরামর্শ, ‘এগুলো বন্ধ করার জন্য দেশের সব সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলকে দলনিরপেক্ষ হতে হবে। প্রশাসনকে সব দলের সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দিতে হবে। বিচারপতিরা যেন রাজনৈতিক প্রভাবে আবদ্ধ না হন, সে ব্যবস্থা করতে হবে।’

অসৎ নেতাদের সাংগঠনিক কাঠামো থেকে বের করে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন স্বপন কৃষ্ণ মিত্র। তিনি লিখেছেন, ‘যেখানেই এ রকম চাঁদাবাজি অন্যায় আর জুলুম হবে, আমার মতে সেখানকার কমিটিগুলো ভেঙে দিয়ে সৎ, যোগ্য আর ত্যাগী কর্মীদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা উচিত।’

শাহাদাত হোসাইন লিখেছেন, ‘সব ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া কিছুই হয় না, আশা করি উনি এই সব বিষয়েও পদক্ষেপ নেবেন।’

ফারুক হোসাইন লিখেছেন, ‘চাঁদাবাজি ও হয়রানি সামাল দিতে না পেরে অনেক ছোট ছোট ব্যবসায়ী পরিবহন ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। কী পদক্ষেপ নিতে হবে, তা সরকার ভালো করে জানে, কিন্তু তারা তা নেবে না।’

(পাঠকদের মন্তব্য প্রথম আলোর ভাষারীতি অনুযায়ী সম্পাদিত)