ভীতি ছড়িয়েছে চিকুনগুনিয়া

চিকুনগুনিয়া। আফ্রিকা মহাদেশের তানজানিয়ার একটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নিজস্ব ভাষার এই শব্দ চলতি বছর ঢাকার অন্যতম আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। কারণ, এ বছর ঢাকায় চিকুনগুনিয়া জ্বরে ভুগেছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। ২০১৭ সালে রাজধানীর ‘সবচেয়ে বড়’ জনস্বাস্থ্য-সমস্যা ছিল এটি। এর প্রকোপ এতই ছিল যে বিভিন্ন মসজিদে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের মোনাজাতে ‘এই মহামারি থেকে মুক্তির জন্য’ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে। 

তবে ঠিক কত মানুষ এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা সম্ভব নয়। এ বছরের জুলাইয়ে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজের মাধ্যমে পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ঢাকা শহরে যে বাসায়ই এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে, সে বাসায় গড়ে দুজনের বেশি (২ দশমিক ৬ জন) আক্রান্ত হয়েছে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ঢাকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিতে থাকে। রাজধানীর চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীর ভিড় বাড়তে থাকে এপ্রিল থেকে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বড় অংশ ছিল শিশু ও বয়স্ক।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায়, ১৯৫২ সালে তানজানিয়ায় চিকুনগুনিয়া রোগ প্রথম শনাক্ত হয়। আর ২০০৮ সালে প্রথম বাংলাদেশে চিকুনগুনিয়ার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়।
গত ৯ এপ্রিল থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষায় নিশ্চিত চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩। এই সময়কালে ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভাব্য চিকুনগুনিয়া এবং এর পরবর্তী আর্থ্রালজিয়া রোগীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৮১৪।
রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর তৎপর হয়ে ওঠে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে করা হয় সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার, শোভাযাত্রা। গত ২০ জুলাই বাড়ি গিয়ে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য হটলাইন নম্বর চালু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
নতুন বছরে চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, গতবার আগাম বৃষ্টির কারণে মশার মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। এবার এই রোগ প্রতিরোধে আগের চেয়ে আরও ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে ডিএসসিসি। তবে নাগরিকদেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। বাড়িতে বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা পানি পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।