হেঁটে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পাড়ি!

ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেল। এতে যে কেউ চাইলেই হেঁটে এই নদী পার হতে পারবেন। সেকশন এলাকার ছবি l সাইফুল ইসলাম
ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেল। এতে যে কেউ চাইলেই হেঁটে এই নদী পার হতে পারবেন। সেকশন এলাকার ছবি l সাইফুল ইসলাম

পুরান ঢাকা আর কামরাঙ্গীরচরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে একসময় পণ্যবাহী বড় ট্রলার-নৌকা চলত। দল বেঁধে মাছ ধরতেন জেলেরা। কামরাঙ্গীরচরের মানুষের রাজধানীতে আসা-যাওয়ার প্রধান যান ছিল নৌকা। স্থানীয় লোকজনের স্মৃতিতে এভাবে ধরা পড়ে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল।

তবে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল ভরাট-দখলের কারণে পুরান ঢাকা আর কামরাঙ্গীরচর প্রায় মিলে গেছে। নৌকার বদলে মানুষ আদি চ্যানেল পাড়ি দিচ্ছেন হেঁটে। বর্ষাতেও আদি চ্যানেল পানি তেমন থাকে না। এ কারণে জীবিকা বদলেছেন জেলেরা।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, আদি চ্যানেল দখলে একধরনের উৎসব চলছে। মালিকানা দাবি করে সাইনবোর্ড টানিয়েছেন অনেকে। আদি চ্যানেল উদ্ধার-খনন-নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কিছুদিন পরপর ‘উচ্ছেদ নাটক’ করছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে আদি চ্যানেলের অনেক জায়গা দখল হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যেই বাকি জায়গা বিলীন হয়ে যাবে।

বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেলের অধিকাংশ জায়গা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। আদি চ্যানেলের এই অংশে পানি নেই। আছে অসংখ্য অবৈধ দোকানপাট-বসতঘর। এর মধ্যে পশ্চিম রসুলপুর-কালুনগরে এই চ্যানেল ছোট খালে রূপ নিয়েছে।

এদিকে এই ওয়ার্ডের প্রায় অর্ধেক এলাকার বাসাবাড়িতে তীব্র গ্যাস-সংকট চলছে। প্রধান সড়কে দিনভর লেগে থাকে যানজট। সড়কে অবাধে চলছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা।

গতকাল রোববার ওয়ার্ড ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

পশ্চিম রসুলপুর, পূর্ব রসুলপুর, দক্ষিণ রসুলপুর, বড়গ্রাম, পশ্চিম বড়গ্রাম, ইসলামনগর, আলীনগর, পশ্চিম আশ্রাফাবাদ, হুজুরপাড়া এলাকা নিয়ে এই ওয়ার্ড গঠিত। এসব এলাকায় ভোটার সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার।

বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেল

ডিএসসিসির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয় সূত্র জানায়, কামরাঙ্গীরচরের লোহার সেতু এলাকা থেকে পশ্চিম রসুলপুরের হাজির ঘাট পর্যন্ত আদি চ্যানেলের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ ডিএসসিসির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন।

লোহার সেতুর কয়েক শ মিটার পূর্ব-দক্ষিণে মূল বুড়িগঙ্গা নদী। দেখা যায়, এই কয়েক শ মিটারে পানি আছে। তবে আবর্জনায় ভরা। আর লোহার সেতু থেকে কালুনগর পর্যন্ত আদি চ্যানেলে পানি নেই। তলদেশে ঘাস-জংলি গাছ জন্মেছে। হেঁটে আদি চ্যানেল পারাপার হচ্ছেন অনেকে। এর মধ্যে লোহার সেতু, রসুলপুর, কালুনগর এলাকায় আবর্জনা স্তূপ হয়ে আছে। রসুলপুর, সেকশন, শহীদনগর, কালুনঘাট, হাজারীবাগ এলাকায় আদি চ্যানেলের ভেতরে ভাঙা বাড়ির ইট-সুরকি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। এর মধ্যে রসুলপুরে ভরাট করা অনেক জায়গায় মালিকানার দাবিসংবলিত সাইনবোর্ড দেখা গেছে। এ ছাড়া রসুলপুর সেতুর দুপাশে শতাধিক অবৈধ দোকানপাট-টিনশেড ঘর তৈরি করা হয়েছে।

পূর্ব রসুলপুরের বাসিন্দা মাহমুদ আলী বলেন, ২০ থেকে ২৫ বছর আগেও এই আদি চ্যানেলে বড় বড় নৌকা চলত। তারও এক যুগ আগে এই শাখা নদীতে গোসল করতেন মহল্লার লোকজন। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে, নদীর দুপাশে দখলের পরিমাণ তত বাড়ছে। যে যেভাবে পারছে নদী ভরাট করে ভোগদখল করছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত নভেম্বর কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুরে আদি চ্যানেলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় ঢাকা জেলা প্রশাসন। কিন্তু কালুনগর তথা পশ্চিম রসুলপুরের একটি অবৈধ ব্যক্তিগত স্টিলের সেতু উচ্ছেদ করা হয়নি।

দেখা যায়, পশ্চিম রসুলপুরে খালের দুপাড় ঘেঁষে একই মালিকের পৃথক দুটি কারখানা। আর এই দুই কারখানার মাঝ বরাবর আছে সেতু। এর ওপর দিয়ে কারখানায় মালামাল আনা-নেওয়া করছেন শ্রমিকেরা। কিন্তু পথচারীদের চলাচলের সুযোগ নেই।

সড়কের প্রস্থ বেড়েছে, যানজট কমেনি

জানা যায়,২০১৬ সালে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের যানজট কমাতে এবং এলাকার সৌন্দর্য বাড়াতে কাউন্সিলরের উদ্যোগে রাস্তাঘাটের প্রস্থ বাড়ানো হয়। এতে পুরো ওয়ার্ডের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিন্তু রসুলপুর প্রধান সড়কের যানজট কমেনি, বরং বেড়েছে। কারণ, এই সড়কের উত্তর মাথায় সেকশন সেতুটি অনেকটা সরু ও নিচু।

দেখা যায়, রসুলপুর সড়কের প্রস্থ প্রায় ২০ ফুট। অথচ সেকশন সেতুর প্রস্থ মাত্র ১০ ফুট। এতে সদরঘাট-গাবতলী বেড়িবাঁধ সড়ক ও রসুলবাগ প্রধান সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি। এতে প্রায় ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সেতু পার হতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে।

রসুলপুর দোকান মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মাহবুবুল হক খান বলেন, রসুলপুর প্রধান সড়ক ও আশপাশ মূলত একটি বাণিজ্যিক এলাকা। এতে এই এলাকায় যান চলাচল বেশি হয়। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সেকশন সেতুর প্রস্থ বাড়াতে হবে।

গ্যাস-সংকট

কামরাঙ্গীরচরের বড়গ্রাম, ইসলামনগর, আলীনগর, হুজুরনগর এলাকায় গ্যাস-সংকট চলছে বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।