আকাশে ডলফিন হাঙর অজগর!

ঘুড়ি উত্সবে রংবেরঙের ঘুড়ি নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন পর্যটকেরা  প্রথম আলো
ঘুড়ি উত্সবে রংবেরঙের ঘুড়ি নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন পর্যটকেরা প্রথম আলো

শীতের বিকেলে সোনালি রোদ। বইছে উত্তরের হাওয়া। কিন্তু একি? আকাশে উড়ছে অজগর, ডলফিন-হাঙর, অক্টোপাস! ডানা মেলেছে ইয়া বড় প্রজাপতিও। এদের মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে লাগছে ঠোকাঠুকি। একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা। ভাবছেন আকাশে আবার এ কোন আজব যুদ্ধ!
যুদ্ধ নয়, বলছিলাম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ঘুড়ি উৎসবের কথা। উৎসবে ওড়ানো হয় বিভিন্ন পাখি ও প্রাণীর আদলে বানানো ঘুড়ি। সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন করে বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন।
গত ৩১ জানুয়ারি বেলা সাড়ে তিনটায় উৎসব উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জুন, কক্সবাজার-৩ আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার, জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ, বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা প্রমুখ।
উৎসব উদ্বোধনের পর বিকেলে অজগর সাপের আদলে করা ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলেন ঢাকা সিটি কলেজের ছাত্রী সাইমা রহমান। একটু পরে তাঁর ঘুড়ির সঙ্গে আরেকটি প্রজাপতি ঘুড়ির টক্কর লাগে। শুরু হয় কাটাকাটি। একসময় অজগরের পরাজয় হয়। সৈকতে দাঁড়িয়ে ঘুড়ির এই কাটাকাটি দৃশ্য উপভোগ করেন পর্যটকেরাও।
কুমিল্লা থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক রাইসুল আলম (৫১) বলেন, ‘গত ৪০ বছরে এই ঘুড়ি ওড়ানোর সুযোগ পাইনি। তাই আজ খুশি মনে মুক্ত আকাশে ঘুড়ি ওড়াচ্ছি।’
আয়োজকেরা জানান, এই উৎসবে ইগল, রুপচাঁদা, প্রজাপতি, ডলফিন, ড্রাগন, ট্রেন, মৎস্যকন্যাসহ অন্তত ৩০ ধরনের হাজারো ঘুড়ি ওড়ানো হয়। সন্ধ্যা ও রাতে ওড়ানো হয় আকর্ষণীয় আলোক ঘুড়ি ও ফানুস বাতি। এবার প্রথম বাংলাদেশের আকাশে মাইক্রোলাইট প্লেন উড্ডয়ন ও অ্যারিয়াল ফটোগ্রাফি প্রদর্শন করা হয়।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন দুপুরে শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানো ও আকাশে ঘুড়ি কাটাকাটির মূল প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার একটি ফ্রিজ পেয়েছেন ঢাকার বংশালের কলেজছাত্র শাওন। দ্বিতীয় পুরস্কার একটি টেলিভিশন পেয়েছেন ঢাকার কসাইটুলির ব্যবসায়ী খাইরুল আলম। তৃতীয় পুরস্কারের গিফটহ্যাম্পার পেয়েছেন তাঁতী বাজারের বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বাবর আলী।
ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন চট্টগ্রামের বেবী হাসান। দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন কক্সবাজারের মহবক এবং হিলা। বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন।
শাহজাহান মৃধা বলেন, ‘ঘুড়ি ওড়ানোর দুটি পূর্বশর্ত হচ্ছে বাতাস আর শুষ্ক আবহাওয়া। এই সৈকতে তার দুটোই রয়েছে। আমরা সৈকতের নির্মল আকাশ-বাতাস রক্ষার দাবিতে এই উৎসবের আয়োজন করেছি।’