ঝগড়ার প্রতিশোধ নিতে এমন হত্যা!

পাবনার বেড়া উপজেলায় খাকছাড়া গ্রামে চাচির প্রতিহিংসার আগুনেই প্রাণ গেছে ছোট্ট তামিমের (৬)। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে চাচি আঞ্জুয়ারা খাতুন (৪৫) তামিমকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। শুধু তা-ই নয়, গতকাল শুক্রবার দুপুরে তাঁর দেখানো জায়গা থেকে স্থানীয় সাংবাদিক ও এলাকাবাসীর সামনে তামিমকে হত্যায় ব্যবহৃত পেটিকোটের ফিতা ও কাস্তে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গতকাল বেলা ১টার দিকে পাবনার বেড়া উপজেলার খাকছাড়া গ্রামে আঞ্জুয়ারার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ আঞ্জুয়ারার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যার আলামত উদ্ধারের জন্য তাঁকে সেখানে নিয়ে গেছে। এ সময় সেখানে বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন, পরিদর্শক (তদন্ত) খায়রুল ইসলাম, স্থানীয় চাকলা ইউপির চেয়ারম্যান ফারুক হোসেনসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ, স্থানীয় সাংবাদিক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আঞ্জুয়ারা সবার সামনে তাঁর ঘর থেকে তামিম হত্যায় ব্যবহৃত পেটিকোটের ফিতা ও একটি কাস্তে বের করে দেন। উদ্ধারের সময় কাস্তেটিতে রক্তের দাগ ও চামড়ার অংশ লেগে ছিল। আলামত উদ্ধারের পর পুলিশ আঞ্জুয়ারাকে আবারও থানায় নিয়ে যায়।
বেড়া থানার ওসি ও পরিদর্শক (তদন্ত) জানান, তামিম হত্যার ঘটনায় তার বাবা মনসুর আমিন গত বৃহস্পতিবার কারও নাম উল্লেখ না করে থানায় হত্যা মামলা করেন। তবে আঞ্জুয়ারার ব্যাপারে তিনি পুলিশকে সন্দেহের কথা জানান। পুলিশ বৃহস্পতিবারই আঞ্জুয়ারাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আঞ্জুয়ারা পুলিশের কাছে তামিমকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
ওসি ও পরিদর্শক (তদন্ত) আঞ্জুয়ারার স্বীকারোক্তি থেকে জানান, একই বাড়িতে তামিমের বাবা মনসুর আমিন ও চাচি আঞ্জুয়ারা বাস করেন। গত ১৬ ডিসেম্বর মনসুর আমিনের সঙ্গে আঞ্জুয়ারার ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে মনসুর আঞ্জুয়ারার গায়ে থুতু দেন। এরপর থেকেই আঞ্জুয়ারা তামিমকে হত্যার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি বাড়ির একটি খড়ের গাদার পাশে তামিমকে একা পান। সেখানে তিনি পেটিকোটের ফিতা দিয়ে তামিমকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে ও পরে কাস্তে দিয়ে গলা কেটে খড়ের গাদায় লাশ লুকিয়ে রাখেন। পরে তামিমের বাড়ির লোকজন খোঁজাখুঁজি করে সেখানে তার লাশ দেখতে পায়। এ নিয়ে গতকাল প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।
এদিকে গতকাল তামিমের বাবা মনসুর আমিন বলেন, ‘আমার ছেলে হত্যার সঙ্গে আঞ্জুয়ারা শুধু একা নয়, আরও কেউ জড়িত রয়েছে বলে আমার ধারণা।’
স্থানীয় চাকলা ইউপির চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বলেন, ‘বাবার ওপর বদলা নিতে গিয়ে হত্যা করা হলো তাঁর শিশুপুত্রকে। এর চেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা আর কী হতে পারে। আমার গোটা ইউনিয়নই এ ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে আছে।’
বেড়া থানার ওসি মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে আঞ্জুয়ারা আমাদের কাছে হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। শিশুটির বাবার প্রতি ঘৃণা ও প্রতিহিংসা থেকেই তিনি নির্মম এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন।’