'পরীক্ষার বদলে র‍্যাফেল ড্র করে নিয়োগ দেওয়া হোক'

রাষ্ট্রমালিকানাধীন ৩ ব্যাংকসহ ৮ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এসেছে। পরীক্ষার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আসনবিন্যাস ঠিকমতো না থাকা, সঠিক সময়ে প্রশ্নপত্র হাতে না পাওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় কী হতে পারে, জানতে চাওয়া হয় পাঠকের কাছে। অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক পাঠক মন্তব্য শুরু করেন। তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন গতকালের পরীক্ষার্থী।

পরিস্থিতি দেখে হতাশ হয়ে নিয়োগের নতুন পদ্ধতি বাতলেছেন য়াতিক য়ারিফুর রহমান। বলছেন, ‘পরীক্ষা-টরীক্ষা বাদ দিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ১০ টাকা করে লটারি বেচা হোক। পরীক্ষার বদলে র‍্যাফেল ড্র করে নিয়োগ দেওয়া হোক।’

প্রতিটি মন্তব্যেই ঝরে পড়ে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির ওপর প্রচণ্ড ক্ষোভ, হতাশা আর অভিযোগ। সাদ্দাম হোসেইনের মতো অনেক পরীক্ষার্থীই এই পরীক্ষাকে প্রহসন বলছেন। যাঁরা ঢাকার বাইরে থেকে এসে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের আক্ষেপটা তুলনামূলক বেশিই। আয়েশা খানম, সোহেল রানা, টুম্পা নাথের মতো অধিকাংশ পরীক্ষার্থীই পরীক্ষা বাতিলের পক্ষে।

আরিফ রবিন একে চরম অব্যবস্থাপনার প্রতিফলন বলছেন। শহিদুল ইসলাম, কেশব আচার্যের মতো অনেকেই পরীক্ষা বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান কমিটিরও অপসারণ চাইছেন। জেসিয়া সরকার, শায়েক পারভেজ তো দায়িত্বরত ব্যক্তিদের রীতিমতো শাস্তি দাবি করে বসলেন।

নির্ঝর রয় চৌধুরী লিখেছেন, ‘এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে? কেন্দ্রগুলোতে আসনবিন্যাস নেই। যে যার মতো বসেছে। বসতে না পেরে অনেক জায়গায় মারামারি। দুজনের বেঞ্চে পাঁচজন। সিট না পেয়ে অনেকে লাইব্রেরিতে বসে আছে। এমন আরও অনেক অভিযোগ আসছে গতকালের আট ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে। প্রায় দুই লাখ ছেলেমেয়ে এসেছে পরীক্ষা দিতে। হাজার হাজার ছেলেমেয়ে আসছে ঢাকার বাইরে থেকে। বহুজন কান্নাকাটি করছে। মিরপুরের শাহ আলী কলেজে সিটের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পরীক্ষার্থী, অব্যবস্থাপনায় সেখানে পরীক্ষাই হয়নি। এর চেয়ে লজ্জাজনক কী হতে পারে?’

মো. মোতাহার হোসেইন লিখেছেন, ‘বিএসসির (ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি) অধীনে আর কোনো ব্যাংকের পরীক্ষা চাই না, যেভাবেই হোক ব্যাংকের পরীক্ষাগুলোও বিপিএসসির অধীনে চাই।’

নাইম হোসেইন বেশ বিশ্লেষণাত্মক মন্তব্য করেছেন। লিখেছেন, ‘ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকে ঢালাওভাবে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করা হয়েছে। অনিয়ম আর অবিবেচক সিদ্ধান্ত শুরু হয় জনতা ব্যাংকের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফলে চরম বৈষম্য থেকে। বিএসসির অধীন এরপর থেকে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি পরীক্ষাও বিতর্ক ছাড়া সমাধান হয়নি। ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি একটি অকার্যকর এবং অদক্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিনা টাকায় পরীক্ষা অনুষ্ঠানের নামে এই কমিটি গঠন ছিল বাস্তবধর্মী ও বেকারবান্ধব। তবে প্রয়োজনীয় আইন এবং সাংবিধানিক ক্ষমতা না থাকায় বিএসসি এখন পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ। পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে এই দায়িত্ব দেওয়া ছাড়া অন্য কোনোভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব না।’

রাশেদুল ইসলামের মতো অনেকে এই পরিস্থিতিকে ফ্রি অ্যাপ্লাই করার কুফল হিসেবে বলছেন। লিখেছেন, ‘অ্যাপ্লাই করার সময় টাকা নিক, গাদাগাদি করে না বসিয়ে এক বেঞ্চে দুজন করে বসাক, কেউ যেন মোবাইল দেখে এক্সাম দিতে না পারে, তা নিশ্চিত করুক—এই প্রত্যাশা।’

স্বরূপ ধর কিছু উপায় বাতলে দিয়েছেন। ১. পিএসসির আদলে পরীক্ষা নেওয়া হোক। ২. ঢাকার ওপর চাপ কমিয়ে বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেওয়া হোক। এতে করে আসন সমস্যা দূর হবে। ৩. পরীক্ষা সুশৃঙ্খল হওয়ার জন্য প্রয়োজনে প্রতিটি বিভাগে বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হোক। ৪. প্রশ্ন প্রণয়ন থেকে সবকিছুই করবে নির্দিষ্ট কমিটি, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা ডিপার্টমেন্ট নয়।

অমিত রায়ও পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব পিএসসিকে দিতে বলছেন। তাঁর মতে, পিএসসির যেহেতু প্রতিটা বিভাগে নিজস্ব অফিস আছে, লোকবল আছে, বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নেওয়ার অনেক দিনের অভিজ্ঞতা আছে, তাদের ওপর দায়িত্ব দিলে তারা ভালোভাবেই পরীক্ষা নিতে পারত।

মাসুদুর রহমানের মতে, গণমাধ্যমের এ ব্যাপারে যতটা সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল, ততটা সোচ্চার ছিল না।

আবু বাকের সিদ্দিক ২০ তারিখে বাতিল হওয়া কেন্দ্রের পরীক্ষা পুনরায় নেওয়ার বিপক্ষে। আর যদি নেওয়াই হয়, তবে পুনরায় সবার পরীক্ষা নিতে বলছেন। তাঁর মতে, একই পদের জন্য দুই প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া প্রহসন।