পলাতকদের সাজা কার্যকরে তদারকি সেলের প্রস্তাব

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের সাজা কার্যকর করার জন্য অবশেষে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি তদারকি সেল গঠন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থা।
তদন্ত সংস্থার সহসমন্বয়ক এম সানাউল হক গত ৩০ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রসচিবকে পাঠানো এক চিঠিতে এ প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার চারজন আসামি পলাতক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত তিনজন ও ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারাধীন মামলার একজন আসামি রয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা কার্যকরের জন্য আদালত তাঁদের গ্রেপ্তারি ও সাজা পরোয়ানা পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে পাঠিয়েছেন। ওই আসামিদের সাজা কার্যকরের বিষয়ে সুশীল সমাজ, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, দেশি-বিদেশি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা করে। বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী হত্যার আসামিদের সাজা কার্যকরের বিষয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু সাজা কার্যকরের বিষয়ে তদন্ত সংস্থা, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি, আইন বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারেন না। আইনগতভাবে পুলিশ প্রশাসন পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সাহায্য ছাড়া তাদের পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। এ জন্য পুলিশকে সাহায্য করতে জরুরি ভিত্তিতে একটি তদারকি সেল গঠন করা প্রয়োজন।
তদন্ত সংস্থার সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে আইজিপির কার্যালয়, পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ও তদন্ত সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এ তদারকি সেল গঠনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে সানাউল হক গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, আন্তমন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয় ছাড়া বিদেশে পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা সম্ভব নয়। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব তদারকি সেল গঠন করে সাজা কার্যকরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
গত বছরের ২১ জানুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম রায়ে ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সদস্য (রুকন) আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। কিন্তু গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর তিনি গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ নজরদারি এড়িয়ে পালিয়ে যান। তাঁর অবস্থান সম্পর্কে এখনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। একই ট্রাইব্যুনাল গত বছরের ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। কিন্তু মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এ দুজনের অবস্থান জানা থাকলেও তাঁদের প্রত্যর্পণের জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়নি সরকার।
এ ছাড়া ট্রাইব্যুনাল-১-এ ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও বিএনপি নেতা এম এ জাহিদ হোসেনের বিচার চলছে তাঁর অনুপস্থিতিতে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তালিকাভুক্ত হওয়ার পরপরই তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। সুইডেনে তাঁকে প্রকাশ্যে দেখা গেছে বলে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা।
তদন্ত সংস্থার সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার বিদেশে পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কারণ, ওই মামলার তদন্ত করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা তদন্তের জন্য পৃথক সংস্থা থাকায় এসব মামলার পলাতক আসামিদের ধরতে পুলিশ প্রশাসনের তেমন উৎসাহ থাকে না। কিন্তু আসামি গ্রেপ্তার করার বা দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা তদন্ত সংস্থার নেই। এসব ক্ষেত্রে তদন্ত সংস্থাকে পুলিশ প্রশাসনের ওপরই নির্ভর করতে হয়। এসব কারণেই এ তদারকি সেল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।