সরাইলে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু গাড়ি উঠলেই কাঁপে

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর এলাকার তিতাস নদীর ওপর ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি দিয়েই চলছে যানবাহন l ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর এলাকার তিতাস নদীর ওপর ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি দিয়েই চলছে যানবাহন l ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় তিতাস নদের ওপর নির্মিত সেতুতে ফাটল তৈরি হয়েছে। কোনো যানবাহন উঠলেই সেতুটি কাঁপতে থাকে। কয়েক বছর ধরেই সেতুটির এ অবস্থা। কিন্তু বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এ সেতুর ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।
ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে সিলেট বিভাগের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র পথ এটি। কোনো কারণে সেতুটি বিকল হয়ে পড়লে যেকোনো সময় প্রাণহানিসহ সিলেটের সঙ্গে সব সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে শাহবাজপুরে তিতাস নদের ওপর নির্মিত হয় ২০৩ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটি। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বর্তমানে সেতুটি খুবই দুর্বল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
সরেজমিনে গতকাল সোমবার দেখা যায়, দক্ষিণ দিকে সেতুতে ওঠার পথে একটি হলুদ সাইনবোর্ড। সেখানে বড় বড় করে লেখা ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু; ২০ টনের অধিক ওজনের যান চলাচল নিষেধ’। সেতুর উত্তর পাশেও রয়েছে সওজের এমন সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু এ পর্যন্তই। ২০ টনের অধিক ওজন বহনকারী ভারী যান চলাচলের বিষয়টি তদারকির জন্য সেতুর কোনো পাশেই সওজ বা হাইওয়ে পুলিশের কোনো লোকজন দেখা যায়নি। সতর্কবাণী অগ্রাহ্য করে সেতুর ওপর দিয়ে ২০ টনের অধিক পণ্যবাহী যান চলাচল করছেই।
প্রায় এক ঘণ্টা সেতুর ওপর ও এর আশপাশ এলাকায় অবস্থান করে দেখা গেছে, সেতুর ওপর দিয়ে প্রতি মিনিটে গড়ে ২০টি পণ্য ও যাত্রীবাহী যান চলাচল করে। অন্তত ৮-১০ জায়গায় সেতুর দুই পাশের রেলিং ভেঙে গেছে। একাধিক জায়গায় ফাটল দেখা গিয়েছে। ফাটল ও ভাঙা অংশে দেওয়া হয়েছে জোড়াতালি। একটি রেলিং হেলে পড়েছে। সেতুর মাঝখানের নিচের দিকে দুটি গ্রাডারেও ফাটল দেখা দিয়েছে। পণ্য ও যাত্রীবাহী গাড়ি উঠলেই সেতুটি শব্দ করে কাঁপতে থাকে।
সিলেট জেলার বাসিন্দা ট্রাকচালক আলম মিয়া বলেন, ‘ট্রাক উঠলেই সেতু নিচের দিকে এক–দুই ফুট ডাইবা যায়। ফতি সপ্তাখে (প্রতি সপ্তাহে) এখবার এই ব্রিরিজ ফার অই। ফার অনের সুময় আল্লাহর নাম স্মরণ খারতে অয়। ভয় খরে, না জানি কোন দিন ভাইঙ্গা ফরে।’
ট্রাকচালক ইছহাক মিয়া বলেন, ‘এই সেতু পার অওয়ার সময় মনডা আঁতকে ওঠে। সেতুর বেইলি সেতু দুই পাশ দিয়ে একসঙ্গে ট্রাক বা অন্য গাড়ি উঠতে বেগ পাইতে হয়। আর কাঁপন ধরলে মনে হয়, এখনই ভাইঙ্গা পড়ব। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে, আল্লাই জানে।’
শাহবাজপুর এলাকার স্থানীয় লোকজন জানান, সেতুটি ধসে গেলে সিলেট বিভাগের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দূরপাল্লার বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ বিপাকে পড়বে।
সরাইল বিশ্বরোড মোড় খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি হোসেন সরকার বলেন, ‘সেতুটির ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কথা সওজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এখনো আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা না আসায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে পারছি না।’
সওজের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু এহতেশাম রাশেদ বলেন, ‘সেতুটি নিয়ে আমরাও খুব চিন্তিত। সেতুটি আরও দুই বছর টেকাতে হবে। তা না হলে সারা দেশের সঙ্গে সিলেট বিভাগের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। সেতুর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কথা ২১ জানুয়ারি সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব স্যারকে বলেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে নতুন সেতু করা হবে। সিলেটের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামিল ইকবাল কাজটি পেয়েছে।’