রাত-দিন ঘুরছে ছাপাখানার চাকা

ছুটির দিনেও কাজ হচ্ছে ছাপাখানায়। গতকাল তোলা ছবি
ছুটির দিনেও কাজ হচ্ছে ছাপাখানায়। গতকাল তোলা ছবি

শুক্রবার দুপুর। তোপখানা রোডের পুরোনো একটি বাড়ির প্রাঙ্গণে ভ্যানে করে কাগজের স্তূপ টানা হচ্ছে। ভেতর থেকে শোনা গেল ছাপাযন্ত্রের খটখট শব্দ। সেখানে ঢুকতেই রঙের ঝাঁজালো গন্ধ নাকে এসে লাগল। ছাপার যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসছে সদ্য ছাপা হওয়া কাগজের বড় পাতা। এখান থেকে বাঁধাইখানায় নেওয়া হবে। চূড়ান্ত গন্তব্য ফেব্রুয়ারির অমর একুশে গ্রন্থমেলা।

বইমেলাকে কেন্দ্র করে রাত-দিন ঘুরছে ছাপাখানার চাকা। সাদা কাগজগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে মেশিনের চাকার তলে পড়ে। এ চিত্র এখন রাজধানীর সব ছাপাখানায়। ব্যস্ততা বাঁধাইখানাতেও।

আর কয়েক দিন পর শুরু হবে একুশে বইমেলা। রাজধানীর ছোট-বড় সব প্রকাশক থেকে শুরু করে মুদ্রণ, বাঁধাই, পরিবহনসহ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক মানুষ প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ছাপাখানা ও বাঁধাইখানাগুলোতে এই ব্যস্ততা গত নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। সময় যত এগোচ্ছে, ব্যস্ততা তত বেড়েছে। মালিকেরা বলেছেন, কাজের চাপে ২৪ ঘণ্টাই ছাপাখানা চালু রাখতে হচ্ছে।

মুদ্রণশিল্প সমিতিতে বর্তমানে ১ হাজার ২৫০ জন সদস্য রয়েছেন। তবে সারা দেশে এ মুদ্রণশিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে ৭ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান। সভাপতি তোফায়েল খান প্রথম আলোকেবলেন, সব প্রতিষ্ঠান একুশে মেলার বই ছাপায় না। কেননা এর পরিমাণটা পাঠ্যপুস্তক বা অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় কম। মূলত ঢাকায় বাংলাবাজার, সেগুনবাগিচা, তোপখানা রোড, ফকিরাপুল, পুরানা পল্টন ও নয়াপল্টন, নীলক্ষেত ও কাঁটাবনে বইমেলার কাজ চলছে।

গত কয়েক দিন এসব এলাকায় ঘুরে ছাপাখানাগুলোতে বইমেলার উত্তাপ টের পাওয়া যায়। বাঁধাই কারখানাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে সেই উত্তাপ। তোপখানার কমলা প্রিন্টার্স এবারের বইমেলা উপলক্ষে প্রথমা প্রকাশন, সাহিত্য প্রকাশসহ বেশ কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বই ছাপছে। গতকাল দুপুরে দেখা গেল, দুটি মুদ্রণযন্ত্রই ব্যস্ত। প্রতিষ্ঠানটি উদ্যোক্তা গোপাল সাহা বললেন, কাজের চাপ এত বেশি যে নভেম্বর মাস থেকে দুই শিফটে ২৪ ঘণ্টা প্রেস চালু রেখেছি।

বড় বড় কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ছাপাখানা থাকলেও মেলায় নির্দিষ্ট সময়ে বই সরবরাহ করার জন্য তাদেরও বিভিন্ন ছাপাখানার ওপর নির্ভর করতে হয়। আবার কিছু প্রকাশনা সংস্থার নিজস্ব ছাপাখানায় নিজেদের বই ছাপার পাশাপাশি অন্য প্রতিষ্ঠানেরও বই ছাপায়। তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান সেগুনবাগিচার প্রগতি প্রিন্টার্স। এ প্রতিষ্ঠানের আরেকটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিশ্ব সাহিত্য ভুবন। নিজের বই ছাপানোর পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু খ্যাতনামা প্রকাশনার বই ছাপার কাজ চলছে বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানের মালিক তোফাজ্জল হোসেন।

ছাপাখানাগুলোর পাশাপাশি সমান তালে ব্যস্ত বই বাঁধাই করার প্রতিষ্ঠানগুলোও। ঋষিকেশ দাশ রোড নয়ন বুক বাইন্ডিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ছাপা হওয়া বই ভাঁজ হচ্ছে। ভাঁজের পর তা ফর্মা আকারে পৃষ্ঠা মিলিয়ে সেলাই হচ্ছে। সুই, সুতা আর ব্লেড—এ নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বাঁধাইকর্মীরা।