গাঁও কামড়ানোর বিলে পলো উৎসব

পলো উৎসবে আসা শত শত মানুষ বাঁশের তৈরি পলো হাতে বিলে নামার আগে অপেক্ষা করছে। হাজরাপুর, মাগুরা ২৬ জানুয়ারি। ছবি: কবির হোসেন
পলো উৎসবে আসা শত শত মানুষ বাঁশের তৈরি পলো হাতে বিলে নামার আগে অপেক্ষা করছে। হাজরাপুর, মাগুরা ২৬ জানুয়ারি। ছবি: কবির হোসেন

কেউ খালি হাতে ফেরেনি। কারও হাতে রুই, কারও হাতে কাতলা। লাফাতে থাকা শোল বা টাকি ধরেও হাসতে হাসতে ফিরল অনেকেই।

দল বেঁধে মাছ শিকার করল সবাই। কমতে থাকা শীতের এই সময়টায় রাজারামপুর গ্রামের গাঁও কামড়ানো বিলে শুরু হলো মাছ ধরার উৎসব। বাঁশের তৈরি পলো দিয়ে চলল এই মাছ শিকার, গতকাল শুক্রবার। মাগুরা সদর উপজেলার হাজরাপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম এই গাঁও কামড়ানো বিল।

পলোয় বেশ কয়েকটি মাছ পেয়ে বড্ড খুশি আলমখালী গ্রামের সাহেব আলী। ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এসেছিলেন। আনন্দে উত্তেজিত সাহেব আলী বলেন, ‘দারুণ লাগল পলো দিয়ে মাছ ধরতে। আমি তিন কেজি ওজনের একটা রুই পেয়েছি। আরও ছোটখাটো অনেক মাছ আছে। পলো ফেলে মাছ ধরার আনন্দই আলাদা।’
একদা এই পলো দিয়ে মাছ ধরা একেবারে গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। গতকাল যেমনটা হলো, একেবারে আগাম ঘোষণা দিয়ে মাছ ধরা—তেমনটা কিন্তু আগে ছিল না। নগরায়ণ হচ্ছে দ্রুত। গ্রামীণ জীবনেও সেই নগরায়ণের ছোয়া কমবেশি লাগছে। তাই এসব সহজাত বিষয় এখন আনুষ্ঠানিক হয়ে গেছে অনেকটা। তাহোক, গতকাল গাঁও কামড়ানো বিলে কিন্তু আনন্দের কমতি ছিল না।
হয়ে গেল দল বেঁধে মাছ শিকারের এক দারুণ উৎসব। স্থানীয়ভাবে এ উৎসবের নাম দেওয়া হয় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘পলো উৎসব’। গ্রামের মানুষের ভালোবাসা, বন্ধন, সৌহার্দ্য, সম্প্রতি আরও মজবুত করতে ব্যতিক্রমী উৎসবের আয়োজন করেন বিল এলাকার আশপাশের অধিবাসীরা।

মাছ ধরে দেখাচ্ছেন কয়েকজন। হাজরাপুর, মাগুরা ২৬ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
মাছ ধরে দেখাচ্ছেন কয়েকজন। হাজরাপুর, মাগুরা ২৬ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

আগে প্রচার করায় আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সের শত শত মানুষ পলো নিয়ে ওই মাছ শিকার করতে আসে বিলে। উৎসবের আমেজে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে অপেশাদার এসব মাছ শিকারিরা। বাঁশের পলো বিলের কম পানিতে চেপে বড় বড় মাছ পলোর নিচে আটকায় অনেকেই। এ সময় রুই, কাতলা, মৃগেল, শোল, গজার, সরপুঁটি, কই, মাগুরসহ নানা জাতের দেশি মাছ পলোতে ধরা পড়ে। কারও পলোতে বড় কোন মাছ আটকালে রীতিমতো চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায়। মাছ ধরে অনেকে উঁচু করে দেখায়, কী মাছ ধরেছে। পলো দিয়ে মাছ ধরা দেখতে বিলের পাশে ছিল বহু উৎসুক মানুষের ভিড়।

পলো উৎসবের উদ্বোধন করেন ওই অঞ্চলের অধিবাসী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু। এ সময় হাজরাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। পলো উৎসবে আসা শত শত মানুষ বিলের কোমরসমান পানিতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাছ ধরে।

পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু বলেন, আগে মানুষ এ সময় উৎসব করে পলো দিয়ে বিলে মাছ ধরত। মানুষের মাঝে সৌহার্দ্য-সম্প্রতি ছিল বেশি। এখন বিলে মাছের সেই জৌলুশ নেই। তারপরও মানুষের মাঝে ভালোবাসার বন্ধন বাড়াতে সৌহার্দ্য-সম্প্রতি বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।