বাড্ডা ইউলুপের কাজ শেষ কবে?

• আগামী জুনের মধ্যেও কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
• জমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত জটিলতা বিলম্বের সবচেয়ে বড় কারণ।
• মূলত ইউলুপ ব্যবহার করা হয় গাড়ির লেন পরিবর্তনের জন্য।
• বাড্ডা ইউলুপটি দৈর্ঘ্যে ৪৫০ ও প্রস্থে ১০ মিটার।
• প্রকল্প ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা।

হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন বাড্ডা প্রান্তের ইউলুপ। প্রথম আলাে ফাইল ছবি
হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন বাড্ডা প্রান্তের ইউলুপ। প্রথম আলাে ফাইল ছবি

হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাড্ডা প্রান্তের ইউ আকৃতির গাড়ি পারাপারের সেতুটির (ইউলুপ) নির্মাণকাজ ঠিক কবে নাগাদ শেষ হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। ২০১৭ সালের শুরুতে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছিলেন, কাজ শেষ করে জুনের মধ্যে এই ইউলুপ চালু করা যাবে। গত বছরের আগস্ট মাসে বলেছিলেন, চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এখন তাঁরা বলছেন, আগামী জুনের মধ্যেও কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ ক্ষেত্রে সব কাজ শেষ করে ইউলুপ চালু হতে আরও এক-দুই মাস বেশি লাগতে পারে।

মূলত ইউলুপ ব্যবহার করা হয় গাড়ির লেন পরিবর্তনের জন্য। হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে যানজটপ্রবণ এই এলাকার বাসিন্দা ও যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে রামপুরা ও বাড্ডা প্রান্তে দুটি ইউলুপ নির্মাণের পরিকল্পনা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এর মধ্যে গত বছরের ২৫ জুন রামপুরা প্রান্তের (দক্ষিণ) ইউলুপটি চালু হয়। কিন্তু দুই বছরেরও বেশি সময় আগে ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে শুরু হওয়া বাড্ডা ইউলুপটির কাজ এখনো চলছে।

নির্মাণকাজের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়া বলেন, ইউলুপ যেখানে হচ্ছে সেখানে মূল সড়কের নিচে ডেসকো, বিটিসিএল, তিতাস, ওয়াসাসহ বেশ কিছু পরিষেবা সংস্থা ছিল। সেগুলো সরাতে সময় বেশি লেগেছে। আর জমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত জটিলতা বিলম্বের সবচেয়ে বড় কারণ।

রাজউকের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ প্রকৌশল নির্মাণ ব্যাটালিয়ন। নির্মাণকাজের দায়িত্বে আছে স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। বাড্ডা ইউলুপটি দৈর্ঘ্যে ৪৫০ ও প্রস্থে ১০ মিটার। প্রকল্প ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা।

ইউলুপ নির্মাণকাজের বিদ্যমান অবস্থা সম্পর্কে কথা বলার জন্য ২৮ জানুয়ারি থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সাঈদ মো. মাসুদের মুঠোফোনে অন্তত সাতবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এর মধ্যে পরিচয় দিয়ে ও আলাপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দুবার তাঁর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।

সেনাবাহিনী অংশের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর সাদিক শাহরিয়ার জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারবেন না। এ অবস্থায় কিছু জানার থাকলে তা লিখিতভাবে প্রশ্নপত্র আকারে জমা দিতে হবে। অবশ্য গত বছরের আগস্ট মাসে প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘এ বছরেও শেষ হচ্ছে না বাড্ডা ইউলুপের কাজ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তিনি বলেছিলেন, ‘এ পর্যন্ত ৭৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে বাকি কাজ শেষ হতে পারে।’

ওই প্রতিবেদন প্রকাশের প্রায় ছয় মাস পর গতকাল হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের রাজউক অংশের পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউলুপের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই মুহূর্তে স্টিলের বক্স গার্ডারগুলো জোড়া দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুটপাতে সার্ভ স্টোন বসানো ও সার্ভিস রোডের কাজ চলছে।’

গত রোববার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুই পাশে ইউলুপে ওঠা-নামার জন্য র‍্যাম্প নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। মাঝের অংশে ক্রেন দিয়ে তোলা ইস্পাতের বাক্স জোড়া লাগানোর কাজ করছেন কিছু ব্যক্তি।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, ইউলুপের র‍্যাম্পের কাজ চলার সময় রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এই সড়কে যানজটের মাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি। এখন তা খানিকটা কমেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রামপুরায় প্রথম ইউলুপটি নির্মাণের পর যানজট নিরসনে সাফল্য পাওয়া গেছে। বাড্ডায় এই ইউলুপ নির্মিত হলে রামপুরা, বনশ্রী বা আফতাবনগরে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন গাড়ি সহজে লেন পরিবর্তন করতে পারবে। এয়ারপোর্ট, মেরুল বাড্ডা, শাহজাদপুর, গুলশান ও কুড়িল যাওয়ার জন্য রাস্তার লেনটিও হবে ইউটার্নমুক্ত। যেসব গাড়ির প্রয়োজন হবে, সেগুলো সহজেই ইউলুপ ব্যবহার করে লেন পরিবর্তন করতে পারবে। ফলে লেন পরিবর্তন করতে গিয়ে এখন যে যানজট তৈরি হয়, তা আর থাকবে না।