শামিন মাহফুজ কোথায়?

শামিন মাহফুজ
শামিন মাহফুজ
  • শামিন ২০১১ সালে প্রথম গ্রেপ্তার হন। 
  • ২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত তিনবার নিখোঁজ। 
  • শামিনের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ বিচারাধীন। 
  • পরিবারের চাওয়া, আদালতে অভিযোগের নিষ্পত্তি হোক। 
  • শামিন পেশায় ছিলেন শিক্ষক।

শামিন মাহফুজ আবারও নিখোঁজ। ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই নিয়ে তিনবার নিখোঁজ হলেন তিনি। নিখোঁজ-গ্রেপ্তার-কারাগারের যে চক্রে শামিন মাহফুজ ঘুরছেন, তার একটি সমাধান চান শামিনের পরিবার। শামিনের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ বিচারাধীন। পরিবারের চাওয়া, আদালতে এই অভিযোগের নিষ্পত্তি হোক।
পারিবারিক সূত্র জানায়, রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে মেধাতালিকায় মাধ্যমিকে পঞ্চম ও উচ্চমাধ্যমিকে সপ্তম স্থান অধিকারী শামিন মাহফুজ পেশায় ছিলেন শিক্ষক। ২০১১ সালের ২৭ মার্চ গবেষণা ও কৃষি খামারের আড়ালে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তোলার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে বান্দরবানের থানচি থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে ছিলেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি একটি এনজিওতে চাকরি নেন। কর্মস্থল ছিল কক্সবাজারের চকরিয়া। ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল বান্দরবান আদালতে হাজিরা দিয়ে চকরিয়ায় ফেরার পথে কয়েকজন লোক বাস থেকে শামিনকে নামিয়ে নিয়ে যান। এর পরের মাসে একদিন শামিন একটি অপরিচিত নম্বর থেকে তাঁর ভাইকে ফোন করে বলেন, তিনি কিছু টাকা পাঠিয়েছেন। তাঁর স্ত্রীর কাছে যেন টাকাটা পৌঁছে দেওয়া হয়।

এরপর ২০১৪ সালের ২ জুলাই তিনটি ককটেলসহ শামিন মাহফুজকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম। যাত্রাবাড়ী থানায় নতুন মামলা হয়। এই মামলায় শামিন কারাগারে ছিলেন ২০১৭ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ওই দিনই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটক থেকে তিনি আবার নিখোঁজ হন। চার দিন পর তাঁর ভাই মুচলেকা দিয়ে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয় থেকে শামিনকে নিয়ে আসেন।

গত বছরের ২০ আগস্ট শামিন মাহফুজ বান্দরবান আদালতে হাজিরা দিতে যান। আদালত তাঁকে বান্দরবান কারাগারে পাঠান। গত ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট আবার তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। বান্দরবান কারাগারের কারাধ্যক্ষ রিজিয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, গত ২ জানুয়ারি শামিন মাহফুজ ও একই মামলার আরেক আসামি ইসমাঈল কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

কিন্তু শামিনের পরিবার বলছে, শামিনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁকে কারাফটক থেকে আবার কেউ ধরে নিয়ে গেল কি না, সে সম্পর্কেও পুলিশ কিছু বলতে পারছে না। শামিন ২০১১ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখান থেকে লম্বা ছুটি নিয়ে তিনি বান্দরবান যান। স্ত্রী, সন্তান ও বাবাকে নিয়ে সেখানেই থাকতেন। পাহাড়ি জমি ইজারা নিয়ে সেখানে ভুট্টার চাষ এবং গবাদিপশু ও মৎস্য খামার করেন।

২০১১ সালের মার্চে থানচি থানা-পুলিশের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, শামিন মাহফুজ ও তাঁর ম্যানেজার ইসমাঈলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তাঁরা থানচি থানা এলাকার মনাইপাড়া, কমলা বাগান এবং লামা থানার কলাইপাড়ায় চাষাবাদ ও খামার করার আড়ালে জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় ছিলেন।

 ওই মামলার জব্দ তালিকায় অসংখ্য জিহাদি বইয়ের কথা উল্লেখ আছে। এর বাইরে মুঠোফোন, হেডফোন, চার্জার, মোবাইল অ্যান্টেনা, দেশলাই ১ হাজার ৪৪৪টি, হ্যামার ২টি, হাতুড়ি ২টি, পাহাড়ি দা ১টি, করাত ১টি, গুনাতার ৩০০ গ্রাম, পেরেক ৫০০ গ্রাম, গ্রাউন্ড শিট, ত্রিপল, প্লাস্টিকের বস্তা ১০টি ও ১টি পুরোনো ব্যাগ পাওয়া যায়। তবে অভিযোগপত্রে পুলিশ বলেছে, তারা শামিন মাহফুজের ইজারা নেওয়া পাহাড়ের নিচ থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক পেয়েছে।

শামিনের পরিবারের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শামিন মাহফুজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করার পর ধানমন্ডিতে আরসিইউডি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতেন। পরে তাঁরা জানতে পারেন ওই প্রতিষ্ঠানে জঙ্গি সংগঠনের লোকজনের যাতায়াত ছিল। সেখানে যাওয়া-আসার সূত্রে তাঁর সঙ্গে এক নারীর পরিচয় এবং তাঁকে বিয়ে করেন।

সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় শামিনের পরিবারের সদস্যরা নাম প্রকাশ করতে চাননি। তাঁরা বলছেন, গুম-গ্রেপ্তার-কারাগারের এই চক্রে পড়ে শামিনের সুস্থ জীবনে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসছে। শামিনকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে নিতে তাঁরা রাষ্ট্রের সহযোগিতা চান।

এ বিষয়ে কী করা উচিত? এমন প্রশ্নে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক এলাহী চৌধুরী বলেন, জঙ্গিবাদের পথ থেকে ফেরানোর জন্য কারাগারের ভেতরে ও বাইরে কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি।