আলুচাষিদের মাথায় হাত, লাভ ব্যবসায়ীদের

.
.

প্রতি কেজি আলু পাইকারদের কাছে চাষি বিক্রি করছেন দেড়-দুই টাকায়। কিন্তু রাজধানীতে বাজারভেদে সেই আলু ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। আলুর উৎপাদন খরচ তুলতে না পারায় চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। আবার ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি দামে। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের লাভ ঠিকই থাকছে।
অবশ্য রাজধানীর অন্যতম পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী দাবি করলেন, আলু ব্যবসায় কৃষকদের মতো তাঁরাও লোকসান গুনছেন। কারণ, চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশি, পরিবহন ব্যয়ও বেশি। পচনশীল হওয়ায় আলু দু-তিন দিনের বেশি আড়তেও রাখা যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে কম দামেই তাঁরা বিক্রি করেন। কিন্তু এর সুফল পান না ক্রেতারা।
এ বছর ৮৫ লাখ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আলু উৎপাদিত হয়েছে ৮৬ লাখ টনেরও বেশি। অনেক স্থানে এখনো খেত থেকে আলু তোলা হয়নি। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছেন, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে ছয় থেকে সাত টাকা খরচ পড়লেও স্থানীয় পাইকারি বাজারে দাম দেড়-দুই টাকা। কোথাও কোথাও দাম এক টাকারও কম। এ কারণে লোকসানের ভয়ে এখন অনেক কৃষক খেত থেকে আলু তুলছেন না।
ব্যবসায়ী ও কৃষকদের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত হরতাল-অবরোধে পরিবহনব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অনেকে তখন খেত থেকে আলু তোলেননি। যাঁরা তুলেছেন, তাঁদের অনেকে আলু কোথাও পাঠাতে পারেননি। হরতাল-অবরোধ শেষে পরিবহনব্যবস্থা স্বাভাবিক হলে হঠাৎ করে আলুর সরবরাহ বেড়ে যায়। এর ফলে কৃষক পর্যায়ে ও স্থানীয় পাইকারি বাজারে দাম পড়ে গেছে।
কারওয়ান বাজারে গতকাল শুক্রবার ডায়ামন্ড জাতের আলু (লম্বা) কেজিপ্রতি ১০, গ্রানোলা জাতের (গোল, আকারে ছোট) আলু সাত থেকে আট টাকায় বিক্রি হয়। তবে এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) কিনলে দাম পড়ে ডায়ামন্ডে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং গ্রানোলায় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। নারিন্দা বাজারে এগুলোর দাম যথাক্রমে ১২ ও আট টাকা। সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার, দোলাইরপাড় বাজারসহ কয়েকটি বাজারে ডায়ামন্ড আলুর কেজি ১৩-১৫ টাকা।
কারওয়ান বাজারের খুচরা বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ জানান, তিনি ১০০ হাতেরও কম দূরের পাইকারি বাজার থেকে ডায়ামন্ড আলু প্রতি কেজি পাঁচ টাকায় কিনে বিক্রি করছেন আট টাকায়। কেজিতে তিন টাকা লাভ করার কারণ দেখাতে বললেন দৈনিক ৩০০ টাকা দোকানভাড়ার কথা।
কারওয়ান বাজারের আড়তে গতকাল ডায়ামন্ড আলু ছয়-সাড়ে ছয় টাকা এবং গ্রানোলা সাড়ে চার-পাঁচ টাকায় বিক্রি হয়। আড়তদার জাকির শেখ জানান, তিনি সম্প্রতি বগুড়া থেকে ডায়ামন্ড সাড়ে চার ও গ্রানোলা আড়াই টাকা কেজি দরে কিনে এনেছেন। ঢাকায় আনতে ট্রাকভাড়াসহ অন্যান্য খরচ পড়েছে কেজিতে আরও এক টাকা। আড়তভাড়া মাসে ৪০ হাজার টাকা। সব মিলিয়েই ঢাকায় দাম বেড়ে যায়।
পাইকারি ব্যবসায়ী মো. হামিদ বলেন, এক সপ্তাহ আগে তিনি ঠাকুরগাঁও থেকে দুই টাকা কেজি দরে ১৫ টন গ্রানোলা আলু কেনেন। এরপর সুতা, বস্তা, শ্রমিক ও দালালের খরচ দিয়ে সেখানেই কেজিপ্রতি এক টাকা বাড়ে। ঢাকায় আনতে ট্রাকভাড়া ২৬ হাজার টাকা। ট্রাক থেকে আলু গুদামে নিতে আরও ৫০ পয়সা লাগে। সব মিলিয়ে প্রতি কেজির দাম দাঁড়ায় সাড়ে চার টাকা। কিন্তু তখন সাড়ে তিন টাকায় আলু বেচে লোকসান দিতে হয়। তিনি বলেন, অবরোধের সময় বেড়ে যাওয়া ট্রাকভাড়া এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
এই পাইকারী ব্যবসায়ীর মতে, আলু বিদেশে রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হলে এই মন্দা কেটে যাবে। কৃষকেরাও লোকসান থেকে বাঁচবেন।
ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে: এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। গতকাল কারওয়ান বাজারে এই মুরগির কেজি ১৫৫ এবং নারিন্দা বাজারে ১৬০ টাকা ছিল।
বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম আগের মতো স্বাভাবিকই আছে। দেশি ও ভারতীয়—উভয় পেঁয়াজের কেজিই ২৫ টাকা। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৩০ থেকে ৩৫, শিম ২০ থেকে ২৫, টমেটো ১৫, পেঁপে ১০, মটরশুঁটি ৩৫ থেকে ৪০, গাজর ১২ থেকে ১৫, গোল বেগুন ৫০, লম্বা বেগুন ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ২৮ ও হাঁসের ডিমের হালি ৪০ টাকা।
চালের বাজারও আগের মতো। গতকাল মানভেদে নাজিরশাইল ৫২ থেকে ৬২, মিনিকেট ৪৮ থেকে ৫০, বিরি-২৮ জাতের চাল ৪৪ থেকে ৪৫ এবং মোটা চাল ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়।