খালেদা অন্তরীণ হলে দলের দায়িত্ব দিতে হবে সতর্কভাবে

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। লা মেরিডিয়ান হোটেল, ঢাকা, ৩ ফেব্রুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। লা মেরিডিয়ান হোটেল, ঢাকা, ৩ ফেব্রুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হলে, বিশেষ করে কারাদণ্ড হলে দল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছেন জেলার নেতারা। এই সতর্কতার কারণ হিসেবে তাঁরা বলেছেন, ‘এক-এগারোর’ মতো কোনো পরিস্থিতি এলে যেন দলের ঐক্য অটুট থাকে। এ ছাড়া আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকার নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের নেতারা।

ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর আজ শনিবার বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। লা মেরিডিয়ান হোটেলে দুই ধাপে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভার দ্বিতীয় ধাপে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিএনপির তৃণমূলের নেতারা তাঁদের দলীয় প্রধানের কাছে এসব কথা বলেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দল চালানোর দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি এ জেড এম গোলাম হায়দার বলেন, ২৪ ঘণ্টার নোটিশে আমরা সারা দেশ অচল করে দিয়েছি। আমরা সারা দেশ অচল করেছি, ঢাকা পারেনি। এবার ঢাকার ভূমিকা দেখতে চাই। ঢাকা কী করবে জানি না।

এ সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেন, দলের চেয়ারপারসনের মামলার রায় এবং আগামী নির্বাচনের প্রশ্নে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করতে হবে। কোনো বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। সরকারের পাতানো কোনো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

বৈঠকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অন্তরীণ হলে তিনিও জেলে যাওয়ার বিষয়ে শপথ করেন। খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে আন্দোলনে জয়ী হয়ে তাঁকে মুক্ত করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বৈঠকে তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, দলের ভেতরে অনেকে অন্তর্ঘাত ঘটাতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যদি এটা করে কিংবা করার চেষ্টা করে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় শৃঙ্খলা মেনে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

বৈঠক শেষের পর সন্ধ্যায় বিএনপি নেতারা যখন একে একে হোটেল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন দাঙ্গা পুলিশের একটি দল হোটেলের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। এরপর বিএনপি নেতারা একে একে বের হতে থাকেন। তবে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সবাইকে বের হতে দেখা যায়নি।

এদিকে সভা শেষে খালেদা জিয়াকে তাঁর গাড়িতে উঠে কিছু সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। দলের দুই-তিন জন জ্যেষ্ঠ নেতার গাড়ি হোটেল ত্যাগের পর তাঁর গাড়ি হোটেল এলাকা ত্যাগ করে। সূত্র জানিয়েছে, আজকের বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ অপেক্ষা করছিল, এই গ্রেপ্তার এড়াতে নেতারা সতর্কভাবে হোটেল ত্যাগ করেন। এ কারণে খালেদা জিয়া গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করে থাকতে পারেন।

গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টের সামনে মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও প্রিজন ভ্যানের তালা ভেঙে দুই কর্মীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পরে এই ঘটনায় দুটি মামলা করে পুলিশ। এই দুটি মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার করার সম্ভাবনা ছিল বলে সূত্র জানিয়েছে।

এ ছাড়া আজ বেলা ১১টার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিএনপির প্রায় ২২ জন কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। এ ছাড়া বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভাকে ঘিরে লা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনে ও পেছনের রাস্তায় পুলিশ, র‍্যাব অবস্থান নেয়। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরাও হোটেলের পাশে অবস্থান করতে দেখা যায়।
অারও পড়ুন
ভোটে যেতে খালেদা জিয়ার ছয় শর্ত