ঋণের চিন্তায় ঘুম আসে না মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহর

মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল্লাহ খা। গত রোববার নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।  ছবি: প্রথম আলো
মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল্লাহ খা। গত রোববার নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ছবি: প্রথম আলো

মাড়াইকলে ধান মাড়াই করতে গিয়ে গত বছরের ২৫ নভেম্বর দুর্ঘটনায় বাম হাতে গুরুতর আঘাত পান মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল্লাহ খা (৭০)। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই মাস ভর্তি ছিলেন। সেখানে দুবার অস্ত্রোপচার করে তাঁর বাম হাতের কনুইয়ের ওপরের অংশ কেটে ফেলা হয়। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে তিনি মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে তাঁর প্রায় ৫০ হাজার টাকা ঋণ হয়ে গেছে। ঋণের টাকা পরিশোধ করা ও নিজের পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি এখন খুবই চিন্তিত। এই চিন্তায় এখন রাতে ভালো করে ঘুম হয় না। অসচ্ছল ওই মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার বড়তলী বানিয়াহারী ইউনিয়নের বড়তলী গ্রামে।
গত রোববার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কথা হয় ওই মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে। আলাপচারিতার একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ তুইল্যা এই টাকা দিয়া বাড়ির সামনে ১৯ শতাংশ জমি কিনছি। এই জমির ধান মাড়াই করতে গিয়ে একটি হলারে (মাড়াইকল) গত বছরের ২৫ নভেম্বর ধানের আঁটি ঢুকাইতে গিয়া বাম হাতে প্রচণ্ড আঘাত পাই। আমাকে প্রথমে নিয়ে আসা হয় মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ওই দিন সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুইবার অপারেশন অইছে। কিন্তু বাম হাতটা কনুইয়ের ওপর পর্যন্ত কাইট্যা ফেলতে অইছে। এই হাসপাতাল থেকে ২৪ জানুয়ারি ছুটি দিছে। দুই দিন বাড়ি আছিলাম। পরে ২৭ জানুয়ারি থাইক্যা মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছি।’
মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল্লাহ খা আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়েডারে বিয়া দিয়া দিছি। সম্পদ বলেতে বাড়ির ভিটেটুকু আর ঋণের টাকায় কেনা ১৯ শতাংশ জমি। বাড়িতে টিনের দোচালা একটি ঘর আছে। তিন মাস পর পর মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকা পাই। হেই টেহা থাইক্যা ঋণের কিস্তি বাবদ ১২ হাজার ৫০০ টেহা কাইটা নেওয়া অয়। এখন আমি পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় আয় বন্ধ অইয়া গেছে। চিকিৎসা বাবদ আমার ৫০ হাজার টেহা ঋণ অইছে। এই ঋণের টাকা ক্যামনে শোধ করবাম, হেই চিন্তায় এখন রাইতে ভালা কইরা ঘুম হয় না।’ মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা সুবীর সরকার বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই মুক্তিযোদ্ধার বাম হাতের কনুইয়ের উপরিভাগ পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে দুই দিন তিনি বাড়িতে ছিলেন। তাই কাটা স্থানে সংক্রমণ হয়ে গেছে। এখন তিনি এই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। নিয়মিত ড্রেসিং করা ও হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এখন অনেকটা উন্নতি হয়েছে।’
মোহনগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদ ইকবাল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল্লাহ খার অসচ্ছল পরিবারটি আর্থিক সহায়তা পেলে খুবই উপকৃত হবে।
মোহনগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ খাকে ভালোভাবে চিনি। তাঁর পরিবার খুব অসচ্ছল।’ তিনি দরিদ্র ওই পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের দাবি জানান।