বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকেরা বিপাকে পড়বেন

মালদ্বীপে চলমান সংকটের প্রেক্ষাপটে সড়কে পুলিশের সতর্ক অবস্থান। ছবি: রয়টার্স
মালদ্বীপে চলমান সংকটের প্রেক্ষাপটে সড়কে পুলিশের সতর্ক অবস্থান। ছবি: রয়টার্স
  • মালদ্বীপে রাজনৈতিক সংকট।
  • জরুরি অবস্থা জারি।
  • বাংলাদেশিদের সতর্ক করা হয়েছে।
  • মালদ্বীপে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ বাংলাদেশি থাকতে পারে।

মালদ্বীপে জরুরি অবস্থা জারিকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটিতে সীমিত আকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তবে এখনই নিষেধাজ্ঞা দিলে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটিতে সংকট দেখা দিতে পারে। আর এটি হলে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকেরা বিপাকে পড়বেন।

মালদ্বীপের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত অতুল কেশাপের বাসায় অনুষ্ঠিত এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এ অভিমত উঠে এসেছে। মূলত শ্রীলঙ্কায় অবস্থান করে মালদ্বীপে সমদূরবর্তী দায়িত্ব পালনরত রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে ওই বৈঠক ডাকেন অতুল কেশাপ। বাংলাদেশ ও ভারতের দুই কূটনীতিককেও ওই আলোচনায় ডাকা হয়।

বিরোধীদলীয় নেতাদের মুক্তিতে আদালতের নির্দেশকে কেন্দ্র করে মালদ্বীপে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। সেখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়ার অ্যাডমিরাল আখতার হাবিব পূর্বনির্ধারিত সফরে এ মুহূর্তে সিঙ্গাপুরে রয়েছেন।

জানতে চাইলে মালেতে বাংলাদেশ দূতাবাসের তৃতীয় সচিব মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, মালদ্বীপে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও জরুরি অবস্থা জারির পর এখানে থাকা বাংলাদেশিদের সতর্ক করা হয়েছে। কাজকর্ম ছাড়া অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাফেরা না করার জন্য বলা হয়েছে। অবসর সময়ে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না থাকতে এবং রাজধানী মালে বা অন্যত্র কোনো সভা, মিছিল বা সমাবেশে অংশ না নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

মালদ্বীপে এ মুহূর্তে কত বাংলাদেশি আছেন, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই বলে জানান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ। তবে তাঁর ধারণা, বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মালদ্বীপে এ মুহূর্তে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ বাংলাদেশি থাকতে পারে।

গতকাল দুপুরে কলম্বোর কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, শ্রীলঙ্কায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত অতুল কেশাপের বাসায় অনুষ্ঠিত ওই আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কূটনীতিকেরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মালদ্বীপ সফর না করার বিষয়ে বিভিন্ন দেশের হালনাগাদ ভ্রমণ বার্তা জারির প্রসঙ্গটি আসে। এ সময় ইইউ প্রতিনিধি জানান, ভ্রমণ বার্তা হালনাগাদ করার পরিবর্তে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট দু-এক দিনের মধ্যে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাব আনতে যাচ্ছে। ওই প্রেক্ষাপটে তখন একাধিক কূটনীতিক মন্তব্য করেন, শেষ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি হলে সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা তৈরি হবে। ফলে বিভিন্ন দেশের শ্রমিকেরা বড় ধরনের সংকটে পড়তে পারেন। এ পরিস্থিতিতে ব্যাপক আকারে নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে সীমিত আকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলেন একাধিক কূটনীতিক।

এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, চীন ও ভারত মালদ্বীপ ভ্রমণের ক্ষেত্রে তাদের দেশের নাগরিকদের সতর্ক করে বার্তা দিয়েছে।

জানা গেছে, কলম্বোয় কূটনীতিকদের আলোচনায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত অতুল কেশাপ মন্তব্য করেন, মালদ্বীপের সংকট উত্তরণে দেশটির প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জরুরি। এ ক্ষেত্রে কোনো সহযোগিতা লাগলে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসবে।

শ্রীলঙ্কায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় গতকালের আলোচনায় মালদ্বীপের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকলে এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি তৈরি হবে বলেও কূটনীতিকেরা মত দেন। তাঁদের মতে, দেশটিতে এখন সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাদক পাচার চক্র বেশ সক্রিয় রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ফলে দ্রুত মালদ্বীপের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সেখানে নানামুখী অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।