শেষ হলো বই-বৈভব

সমাপনী দিনে অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রকাশনা সংস্থার প্রতিনিধিরা। ছবি: প্রথম আলো
সমাপনী দিনে অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রকাশনা সংস্থার প্রতিনিধিরা। ছবি: প্রথম আলো

যেমনটা হয় বরাবর—বিপুল লোকসমাগম আর শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত বেচাকেনা। এমনই হলো গতকাল বুধবার, বইবৈভবের শেষবেলায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। তিলধারণের ঠাঁই ছিল না কোনো কোনো প্রকাশনা সংস্থার বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে। প্রকাশকেরা ব্যস্ত ছিলেন পাঠক-ক্রেতাদের সামাল দিতে।
তবু অমর একুশে বইমেলার শেষ প্রহরে লেখক-প্রকাশকদের বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে দেখা গেল। আবার এক বছরের বিরহের আশঙ্কায় মন খারাপ করে ঘুরে বেড়িয়েছেন লেখক-প্রকাশক-ক্রেতারা। নির্বিঘ্ন ছিল এবারের মেলা। শুরুর দিকে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সংশয় দেখা দিয়েছিল। তবে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাদে অন্য কোনো দিন এর কোনো প্রভাব পড়েনি মেলায়। বাকি সব কটি দিন দারুণ জমেছিল মেলা।
গতকাল বুধবার শেষ দিনের সন্ধ্যায় সবার মুখে ছিল বইয়ের সংখ্যা, বইয়ের মান এবং বেচাকেনা নিয়ে আলোচনা। বিক্রির পরিমাণ যেকোনো সময়ের মেলাকে ছাড়িয়ে যায়। মেলায় ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকাশনা সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, এবার মেলায় মোট ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে, যা গতবারের তুলনায় ৫ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত শুধু বাংলা একাডেমিই ১ কোটি ৬২ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে।
এবার মেলায় নতুন বই এসেছে ৪ হাজার ৫৯১টি। গতবারের মেলায় নতুন বই এসেছিল ৩ হাজার ৬৪৬টি। অর্থাৎ এবার ৯৪৫টি বই বেশি প্রকাশিত হয়েছে। এবারও কবিতার বই বেশি প্রকাশিত হয়েছে—১ হাজার ৪৭২টি। সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থান আছে যথাক্রমে গল্পগ্রন্থ ৭০১টি ও উপন্যাস ৬৪৩টি। বাংলা একাডেমির নিজস্ব জরিপে এবারের মেলায় প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে ৪৮৮টি মানসম্পন্ন।
প্রয়াত লেখকদের মধ্যে শহীদ কাদরী, সৈয়দ শামসুল হক, শওকত আলী, দ্বিজেন শর্মা প্রমুখের নতুন বই ছিল মেলায়। নিয়মিত লেখকদের মধ্যে ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক, হরিশংকর জলদাস, মোহিত কামাল, সুমন্ত আসলাম প্রমুখের নতুন বইয়ের বেশ কাটতি ছিল। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের পুরোনো বইগুলোর প্রতি পাঠকদের আগ্রহ দেখা গেছে। তুলনামূলক তরুণ লেখকদের মধ্যে সাদাত হোসাইন, লতিফুল ইসলাম শিবলী, মোস্তফা মামুন, সালেহীন শিপ্রা, মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, সাগুফতা শারমীন তানিয়া, পিয়াস মজিদ, মিরাজুল ইসলাম প্রমুখের নতুন বই আলোচনায় ছিল। শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা বইয়ের মধ্যে মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব, দন্ত্যস রওশন, মোশতাক আহমেদ, আহমেদ রিয়াজ, পলাশ মাহবুব প্রমুখের নতুন বইয় বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এবার নন-ফিকশন বইয়ের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ দেখা গেছে পাঠকদের। এর মধ্যে শীর্ষে ছিল প্রথমা প্রকাশন থেকে আসা বইগুলো। প্রথমা থেকে আসা সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.), আওয়ামী লীগ: যুদ্ধদিনের কথা ১৯৭১, আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, বিদ্রোহী রণক্লান্ত: নজরুল-জীবনী, দ্য থিওরি অব এভরিথিং বইগুলোর বেশ চাহিদা ছিল।

বইমেলার শেষ দিনে ছিল পাঠকদের ভিড়। গতকাল বিকেলে। প্রথম আলো
বইমেলার শেষ দিনে ছিল পাঠকদের ভিড়। গতকাল বিকেলে। প্রথম আলো


গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রথমার
গতকাল মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিকসংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য প্রথমা প্রকাশনকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রথমা প্রকাশনের পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক জাফর আহমেদ রাশেদ। তিনি বলেন, এবারের মেলায়ও মানসম্মত বইয়ের জন্য পাঠকদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল প্রথমা। ১ মার্চ ২০১৭ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে ৭০টি নতুন বই।
এ ছাড়া সেরা গ্রন্থ বিভাগে পৃথিবীর পথে হেঁটে বইটির জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশন্স, বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক উত্তরাধিকার গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুকস এবং মিনি বিশ্বকোষ পাখি গ্রন্থের জন্য সময় প্রকাশনকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য চন্দ্রাবতী একাডেমিকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং নান্দনিক অঙ্গসজ্জার জন্য কথাপ্রকাশকে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। মেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সদস্যসচিব জালাল আহমেদ। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিসচিব মো. ইব্রাহীম হোসেন খান।