অনুসন্ধানের ইতিকথা

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন হয়েছিল ২০০০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। সংশোধিত হয় ২০০৩ সালে। আইনটির মাথায় লেখা আছে, ‘নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন।’

এর আগে ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) ছিল। তার আগে ১৯৮৩ সালে এসেছিল নারী নির্যাতন (নিবর্তক শাস্তি) অধ্যাদেশ। তারও আগে ছিল দণ্ডবিধির কিছু ধারা।

কিন্তু অপরাধ দমন হচ্ছেই না, বরং বাড়ছে। একদিকে শোনা যায় বিচারে সাজা হচ্ছে না, অন্যদিকে অনেকেই বলেন যে এই আইনে মামলাগুলোর বড় অংশ ভুয়া।

আসল ছবিটি গভীরভাবে বুঝতে প্রথম আলো নিয়েছিল এক দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রকল্প। বিষয় ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, যৌন হয়রানি, সম্ভ্রমহানি করে আত্মহত্যায় প্ররোচনা এবং যৌতুকের জন্য হত্যা-এই ছয়টি গুরুতর অপরাধের মামলা।

১৯৯৫ সালের আইনে বিশেষ আদালত হয়েছিল। ২০০০ সালের আইনে হয়েছে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল’। আইন অনুযায়ী প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি ট্রাইব্যুনাল থাকার কথা ছিল। সেখানে বিচারের দায়িত্ব ছিল জেলা ও দায়রা বিচারকদের একজনের। আইন মন্ত্রণালয় বলছে, সারা দেশে ট্রাইব্যুনাল এখন ৫৪টি। আগের আইনের আদালত আর অবশিষ্ট সব মামলা এসব ট্রাইব্যুনালে চলে গেছে।

ঢাকা জেলায় প্রথম ট্রাইব্যুনালটি হয় ১৯৯৬ সালে। ২০০২ সালে দুটি আর পরের বছর আরও দুটি ট্রাইব্যুনাল কাজ শুরু করে।

প্রথম আলো এই পাঁচটি ট্রাইব্যুনালের বছরওয়ারি বিচারিক নিবন্ধন খাতা থেকে উল্লিখিত ছয়টি অপরাধের মামলার মূল তথ্যগুলো টুকে এনে এক্সেলে তথ্যভান্ডার তৈরি করেছে। এসব তথ্য ২০০২ থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছরের।

এসব তথ্য নিয়ে প্রথম আলোর অনুসন্ধান চলেছে দেড় বছর। নিবিড় তদারকিতে দুই দফায় তথ্যগুলো মিলিয়ে দেখে এসপিএসএসে সেসব বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তারপর আরও যাচাই চলেছে। ৬৫টি মামলা বিশেষভাবে খুঁটিয়ে দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে মামলার জড়িত মানুষজনের সঙ্গে। প্রথম আলোর সংবাদ পরামর্শক কুর্রাতুল-আইন-তাহ্মিনার নেতৃত্বে এই অনুসন্ধানী দলে যুক্ত ছিলেন প্রতিবেদক আসাদুজ্জামান ও প্রণব ভৌমিক এবং জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক গোলাম মর্তুজা। আদালতের কর্মচারীরা ঢাউস ব্যবহারজীর্ণ নিবন্ধন খাতাগুলোয় মামলার বিচারিক তথ্য হাতে টুকে রাখেন। অনেক মামলার নিষ্পত্তির তারিখ নিবন্ধিত হয়নি। তথ্য মিলিয়ে দেখতে গিয়ে টোকার ভুল চোখে পড়েছে। তথ্যভান্ডারে সেগুলো শুধরে নেওয়া হয়েছে। তবু এমন ভুল আরও থাকতে পারে। প্রথম আলোর টোকাতেও কিছু ভুল থাকা সম্ভব।

দীর্ঘ এই অনুসন্ধানে শুকনো পরিসংখ্যান ছাপিয়ে তীব্রভাবে উঠে এসেছে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর উপায়হীনতার দিকটি। সমাজ, পরিবার, এমনকি রাষ্ট্রকেও তাদের পাশে পাওয়া যায়নি। আজ প্রকাশিত এবং আগামীতে প্রকাশিতব্য এ-সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন নিয়েই প্রথম আলোর আয়োজন ‘নারী-শিশু নির্যাতন মামলা’।