যে স্কুলে দৌড়ে দৌড়ে ক্লাস নেন শিক্ষকেরা

নান্দাইলের ৩২ নম্বর রসুলপুর (উত্তর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানাচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো
নান্দাইলের ৩২ নম্বর রসুলপুর (উত্তর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানাচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ৩২ নম্বর রসুলপুর (উত্তর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হতো এখানে। তিন বছর পর ২০১৫ সালে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো শুরু হয়। কিন্তু অতিরিক্ত এসব ক্লাস নেওয়ার জন্য কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতে অল্প যে কজন শিক্ষক আছেন, মোটামুটি দৌড়ের ওপর থাকতে হয় তাঁদের।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি (৩৩ নম্বর পত্র) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে দুজন করে বিএড ডিগ্রিধারী শিক্ষককে পদায়ন দিতে নির্দেশ দিয়েছিল। তা কাগজে-কলমেই থেকে গেছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিকের ছয়টি শ্রেণিতে (শিশু শ্রেণিসহ) ৪৭৩ জন এবং ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে ২০২ জন শিক্ষার্থী আছে। ৬৭৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র আটজন। তাঁদের মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ও অন্যজন রয়েছেন প্রশিক্ষণে। প্রতিদিন একসঙ্গে নয়টি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। তখন ছয়জন শিক্ষককে নয়টি শ্রেণিকক্ষে ছোটাছুটি করে পড়াতে হয়।

সাহিদা আরবী নামের সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘একটি শ্রেণিতে পড়াতে পড়াতে আরেক শ্রেণিকক্ষে ছুটে যাই। এভাবে ছুটতে ছুটতে অনেক শিক্ষক অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন।’

স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের পড়ানোর জন্য বাড়তি কোনো শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষক মো. মাজহারুল ইসলাম বলছেন, আলাদা আলাদা সময়ে তিনজন শিক্ষক প্রেষণে এই স্কুলে যোগ দেন। কিন্তু তাঁরা কেউ তিন মাসের বেশি থাকেননি। আরও পাঁচজন শিক্ষককে প্রেষণে এই স্কুলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁরাও যোগ দেননি।

স্কুলের পরিচালনা কমিটির (এসএমসি) সভাপতি মো. শরীফ নেওয়াজ খান বলেন, গত ৪ মার্চ শতাধিক শিক্ষার্থী শিক্ষকের দাবিতে বিক্ষোভ করে। কোনো উপায় না দেখে তিনি তাদের নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হাফিজুর রহমানর সঙ্গে কথা বলেন। ইউএনও চার দিনের মধ্যে একজন শিক্ষক পাঠাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি।

এ বিষয়ে ইউএনও মুঠোফোনে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানকে বলে তিনি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন।

ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থী জানায়, প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক থাকলে পড়াশোনায় আরও ভালো করতে পারতাম। স্কুলে খেলার মাঠ নেই। খেলাধুলা করতে পারি না। আমরা সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়ছি। আমাদের সমস্যাটি নিয়ে কেউ ভাবে না।

এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউপিইও) আনারকলি নাজনীন বলেন, ‘সরকার শিক্ষক নিয়োগ না দিলে আমার তো কিছুই করার নেই।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) মো. মোফাজ্জল হোসেন পদ সৃষ্টি করে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করছেন বলে জানান।