পুলিশের ওপর হামলার আসামি 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত

পুলিশকে গুলি করে অস্ত্র ছিনতাই মামলার আসামি মো. সুমন ওরফে জিরা সুমন (২৭) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।
একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন জামাল হোসেন (২৫) নামের এক যুবক। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্রসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। জামাল পুলিশি পাহারায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ডিবির ভাষ্য, সুমনের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগে কুমিল্লার বেশ কয়েকটি থানায় ২১টি মামলা আছে। আহত ও গ্রেপ্তার যুবকেরা তাঁর সহযোগী। তাঁরা পেশাদার ডাকাত।
‘বন্দুকযুদ্ধের’ বিষয়ে ডিবি পুলিশের দাবি, মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) আলী আশরাফ ভূঞার নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি দল মাইক্রোবাসে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় একটি বিশেষ অভিযানে যান। অভিযান শেষে ফেরার পথে তাঁরা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার পালপাড়া সেতু এলাকায় গেলে সড়কে বাঁশের প্রতিবন্ধক দেখতে পান। এতে চালক মাইক্রোবাসের গতি কমিয়ে দেন। তখন একদল যুবক হঠাৎ মাইক্রোবাসের সামনে গিয়ে গতিরোধের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তাঁরা মাইক্রোবাসের সামনের কাচ ভেঙে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে শটগানের গুলি ছোড়ে। এতে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হন। এরপর পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্রসহ ওই যুবকদের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে আহত দুই যুবককে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে নিহত, আহত ও গ্রেপ্তার যুবকদের নাম-পরিচয় জানা যায়।
ডিবির ভাষ্য, গ্রেপ্তার তিনজন হলেন জাকির হোসেন (৩০), স্বপন মিয়া (২২) ও শহিদুল ইসলাম (২৬)। তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ি কুমিল্লায়। তাঁদের কাছ থেকে একটি রিভলবার, ছয়টি গুলি, একটি চাকু, একটি লোহার রড ও পাঁচটি কালো রঙের মুখোশ উদ্ধার করা হয়।
গতকাল বুধবার অস্ত্র আইনে এবং ডাকাতির চেষ্টা ও পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধার অভিযোগে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় তিনটি মামলা করে ডিবি। গতকালই জাকির, স্বপন ও শহিদুলকে অস্ত্র আইনে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কুমিল্লার আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই মামলায় আহত জামালকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁর চিকিৎসাধীন থাকার কথা আদালতকে জানানো হয়।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী আশরাফ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ডাকাতির উদ্দেশ্যেই ওই যুবকেরা মাইক্রোবাসে হামলা করেছিলেন। পরে ডিবি পুলিশ দেখে তাঁরা গুলি ছোড়েন। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চার ডিবি সদস্যও আহত হন। তাঁদের কুমিল্লা মেডিকেল থেকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আলী আশরাফের ভাষ্য, প্রায় চার বছর আগে ভারত থেকে আনা এক ব্যবসায়ীর জিরা ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে সুমনের বিরুদ্ধে। এরপর থেকে এলাকায় তিনি জিরা সুমন নামে পরিচিতি পান।
ডিবি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, গত বছরের ৬ নভেম্বর কুমিল্লা নগরের ঝাউতলা এলাকায় জিরা সুমনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী কুমিল্লা জেলা ডিবির এসআই ফিরোজ হোসেনকে গুলি করে এবং তাঁর পিস্তল ও তিনটি গুলি ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় সুমনকে ১ নম্বর আসামি করে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা হয়। ৯ নভেম্বর কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার ডিবি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জিরা সুমনের দুই সহযোগী মারা যান। তাঁদের কাছ থেকে খোয়া যাওয়া পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ওপর হামলা ছাড়াও সুমনের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, ডাকাতিসহ ২১টি মামলা আছে।
সুমন পরিবার নিয়ে কুমিল্লার অশোকতলা এলাকায় থাকতেন। ঘটনার পর তাঁর পরিবার এলাকা ছেড়ে গেছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সুমনের লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ মর্গে পড়ে ছিল। তাঁর পরিবারের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পুলিশি পাহারায় চিকিৎসাধীন থাকায় আহত জামালের বক্তব্য নেওয়াও সম্ভব হয়নি।