রথীশ হত্যার পরিকল্পনা হয় দুমাস আগে: র‍্যাব মহাপরিচালক

রংপুরে র‍্যাব-১৩ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সংস্থার মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। ছবি: মঈনুল ইসলাম
রংপুরে র‍্যাব-১৩ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সংস্থার মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুরের আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক (৫৮) হত্যা প্রসঙ্গে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেছেন, নিহত ব্যক্তির স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়ে প্রেমিক কামরুল ইসলামের সহায়তায় তাঁর স্বামীকে খুন করেন। রথীশের স্ত্রীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, দুই মাস আগে তাঁরা হত্যার পরিকল্পনা করেন।

আজ রংপুরের র‍্যাব-১৩ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন র‍্যাব মহাপরিচালক। আজ দুপুর ১২টার দিকে এ ব্রিফিং হয়।

কামরুল ইসলাম ও স্নিগ্ধা সরকার দুজনই তাজহাট উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। লিখিত বক্তব্যে বেনজীর আহমেদ বলেন, হত্যার কাজে সহায়তা করেছেন বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত ১০টা দিকে শোয়ার ঘরে রথীশকে ভাত ও দুধের সঙ্গে ১০টি ঘুমের বড়ি খাওয়ানো হয়। ঘুমের বড়ি খাওয়ানোর পর অচেতন হয়ে গেলে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। হত্যার পর রাতে মৃতদেহ শোয়ার ঘরেই রেখে দেওয়া হয়।

র‍্যাব মহাপরিচালক জানান, এরপর শিক্ষক কামরুল পরদিন শুক্রবার ভোর পাঁচটায় রথীশের বাড়ি থেকে বের হন। সকাল নয়টায় তিনি একটি ভ্যান নিয়ে আসেন। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী তাঁর প্রেমিকের সহায়তায় একটি আলমারি পরিবর্তনের নাম করে সেই আলমারিতে লাশ ভরে নিয়ে তাঁদের বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে শহরের তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকায় একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে বালু খুঁড়ে পুঁতে রাখেন। ওই আলমারি বহন করে ভ্যানে তোলার কাজে তিনজন ব্যক্তি নিয়োজিত ছিল, তাদের কামরুল ঠিক করেন।

নিহত ব্যক্তির স্ত্রীর দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির জানান, রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব গতকাল মঙ্গলবার নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন এবং মৃতদেহের অবস্থান সম্পর্কে র‌্যাবকে জানান। এরপর র‌্যাব গতকাল রাত ১১টায় শহরের তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনের ভেতর থেকে মাটি খুঁড়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। রাত আড়াইটায় নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।

র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই বাড়িতে বালু খোঁড়াখুঁড়ি করে লাশ লুকানোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই কিশোরকে আটক করেছে র‌্যাব। তারা রথীশের স্ত্রী ও কামরুলের ছাত্র। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের নাম প্রকাশ করা হলো না। ওই দুজন র‌্যাবকে জানিয়েছে, কামরুল মাস্টারের নির্দেশে ৩০০ টাকার বিনিময়ে গত ২৬ মার্চ ওই নির্মাণাধীন ভবনের নিচে বালু খুঁড়ে রাখে। পরবর্তী সময়ে গত ৩০ মার্চ বেলা ১১টার সময় বালু দিয়ে গর্তে ঢেকে রাখে। কামরুল তাদের শিক্ষক হওয়ায় তারা আদেশ পালন করে।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্নিগ্ধা সরকার, কামরুল ইসলাম, দুই এলাকাবাসীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর আগে এই নিখোঁজের ঘটনায় ১ এপ্রিল নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নামে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন।

রথীশ চন্দ্র রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক, জেলা আইনজীবী সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি রংপুর জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক বাবু সোনা নামে পরিচিত এই আইনজীবী হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ও রংপুর জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি।

এ ছাড়া তিনি জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি ও মাজারের খাদেম হত্যা মামলার সরকারি কৌঁসুলি ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এ টি এম আজহারুল ইসলামের মামলার সাক্ষী ছিলেন তিনি।