রাত পোহালেই বৈশাখী উৎসব

দিন ফুরাল আরও এক বছরের। আজ ১৪২৪ বঙ্গাব্দের বিদায়। রাত পোহালেই নতুন বছর। আবহমানকালের বাঙালি ঐতিহ্যের বরণডালা সাজিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বিপুল আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে দেশজুড়েই। রাজধানীতে রীতিমতো সাজ সাজ রব। চারুকলায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনে শেষ পর্যায়ের ব্যস্ততা, শিশু একাডেমীর সামনে মৃৎ ও কারুশিল্পের দোকানগুলোতে কেনাকাটার ধুম। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে চৈত্রসংক্রান্তির আসর, বৈশাখ বরণ অনুষ্ঠানের মহড়া। আর সুপারমার্কেটগুলোর দোকানে দোকানে বৈশাখী সাজসজ্জাসমেত বিশেষ ছাড়ের ছড়াছড়ি।

গতকাল চারুকলা অনুষদে দেখা গেল, বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রার শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি নিয়ে শিক্ষার্থী দলের দম ফেলার ফুরসত নেই। মাঝের দু-তিন দিন ‘কোটা আন্দোলন’কে কেন্দ্র করে উত্তেজনায় তাদের কাজের প্রবাহ খানিকটা থমকে গিয়েছিল। সময়ের ফলে শেষ পর্যায়ে এসে ব্যস্ততা একটু বেড়েছে বলে জানালেন প্রস্তুতি কমিটির দায়িত্বরত যুগ্ম আহ্বায়ক আফি আজাদ। তহবিল সংগ্রহের জন্য যেসব সরা, মুখোশ ইত্যাদি তৈরি ও ছবি আঁকা হচ্ছে, তা বিক্রি হচ্ছে যথেষ্ট। এসব শিল্পকর্ম কিনে নগরবাসী নববর্ষের এই বর্ণাঢ্য আয়োজনে স্বতঃস্ফূর্ত আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকেন।

মানুষে মানুষে বিভেদ, বিদ্বেষ ঘুচিয়ে মানবতার বন্ধনে সবাইকে আপন করে নেওয়ার তাগিদ থেকেই এবারের উৎসবের প্রতিপাদ্য লালন সাঁইয়ের গানের চরণ, ‘মানুষ ভজলে সেনার মানুষ হবি’। চারুকলার তিন দিনের বৈশাখী উৎসব আজ শুক্রবার বিকেল চারটায় শুরু হবে বকুলতলায় চৈত্রসংক্রান্তির লোকগানের আসর দিয়ে। পয়লা বৈশাখের সকালে বের হবে উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা। বড় প্রতীক থাকবে টেপাপুতুলের আদলে গড়া পাখি ও ছানা, জাল ও জেলে, মা ও শিশু, বাঘ ও বক, মহিষ ইত্যাদি। শেষ দিন শনিবার সন্ধ্যায় বকুলতলায় হবে যাত্রাপালা বাগদত্তা।

ছায়ানটের আয়োজনে রমনার বটমূলে এবার ৫১ তম পয়লা বৈশাখের প্রভাতি অনুষ্ঠান শুরু হবে ভোর সোয়া ছয়টায় বাঁশিতে ভোরের রাগের পরিবেশনায়। দেড় শতাধিক শিল্পী এতে অংশ নেবেন। একক, সম্মেলক গান ও আবৃত্তি দিয়ে সাজানো হবে অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের অনুশীলন চলছে ছায়ানটে। আজ শুক্রবার বিকেলে বটমূল মঞ্চে হবে চূড়ান্ত মহড়া।

শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা পরিচালিত সংগীত সংগঠন সুরের ধারার চার দিনের বৈশাখী উৎসব গত বুধবার শুরু হয়েছে শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। আজ সন্ধ্যায় এখানে চৈত্রসংক্রান্তির অনুষ্ঠান শুরু হবে হাজার কণ্ঠের গান দিয়ে।

নববর্ষ উপলক্ষে চার দিনের গানের অনুষ্ঠান করছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। কাল থেকে লালমাটিয়ার বেঙ্গল বইতে শুরু হয়েছে ‘পরান ভরি দাও’ নামের এই আয়োজন। অন্য বড় অনুষ্ঠানের মধ্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট পয়লা বৈশাখ বিকেল চারটায় অনুষ্ঠান করবে ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে আর ওই দিন সকালে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী অনুষ্ঠান করবে শাহবাগে শিশু একাডেমীর সামনের নারকেলবীথি চত্বরে। প্রস্তুতি সম্পন্ন, এখন অপেক্ষা শুধু ভোরের সূর্য ওঠার।

অনুষ্ঠান পাঁচটায় শেষ করতে নির্দেশ
বিকেল পাঁচটার মধ্যে নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। তবে জোটের অনুষ্ঠান চলবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান নিয়ে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই। পুলিশ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা জারি রাখবে। ভুভুজেলা বাজানো যাবে না, আর যান চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হবে।