জাহাঙ্গীরের টাকা অস্ত্র শিক্ষা সব বেড়েছে

জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থীদের মধ্যে এখন সবচেয়ে সম্পদশালী আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম। গত পাঁচ বছরে তাঁর টাকা, অস্ত্র ও শিক্ষা—সবই বেড়েছে।

বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার প্রথমবারের মতো হলফনামা জমা দিয়েছেন। তাতে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। তবে সামাজিকভাবে তিনি বিত্তশালী হিসেবে পরিচিত।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ছিলেন। তখন দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী তিনি এমএ পাস। এবারের হলফনামায় দেখা গেছে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ, এলএলবি। ২০১৩ সালের হলফনামায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কোনো মামলার উল্লেখ ছিল না। তবে এবার তিনি দুটি মামলার কথা উল্লেখ করেছেন। একটিতে খালাস ও অন্যটিতে অব্যাহতি পেয়েছেন বলে জানান।

২০১৩ সালে জাহাঙ্গীর আলমের বার্ষিক আয় ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৫ হাজার ৯৫০ টাকা। বর্তমানে তাঁর বার্ষিক আয় ২ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাতে ১ লাখ ৫০ হাজার, বাড়িভাড়া ৪ লাখ ৩০ হাজার, ব্যবসা থেকে ৯৪ লাখ ২০ হাজার ও অপ্রদর্শিত ১ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ আছে ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ব্যাংকে তাঁর ব্যবসার পুঁজি জমা আছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭১ টাকা। ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৭ টাকা। সঞ্চয়পত্র আছে ১০ লাখ টাকার। এ ছাড়া তাঁর দুটি গাড়ি, একটি বন্দুক, একটি পিস্তল আছে।

জাহাঙ্গীরের স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ১ হাজার ৫৩৬ শতাংশ জমি। এর মধ্যে কৃষিজমি ১ হাজার ৪৯৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, অকৃষিজমি ৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। আবাসিক, বাণিজ্যিক জমি ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। জমি বিক্রির জন্য বায়না বাবদ নেওয়া ৮ কোটি টাকাকে ঋণ হিসেবে দেখিয়েছেন তিনি।

জাহাঙ্গীর পেশায় ব্যবসায়ী। অনারেবল টেক্সটাইলস কম্পোজিট এবং জেড আলম অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।

হলফনামা অনুযায়ী, বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ। পেশা ব্যবসা। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা আছে পাঁচটি। দুটিতে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। একটি খারিজ, একটি বিচারাধীন ও অন্যটি তদন্তাধীন আছে।

হাসান উদ্দিনের বার্ষিক আয় ১০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা। তাঁর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৪ লাখ টাকা ও স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ১৯ লাখ টাকা। এর বাইরে দুজনের ৫৩ তোলা স্বর্ণসহ গৃহস্থালিসামগ্রী আছে। হাসান উদ্দিনের নামে একটি পিস্তল ও একটি শটগান এবং তাঁর স্ত্রীর নামে একনলা বন্দুকের লাইসেন্স আছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে হাসান উদ্দিনের নামে ৫৯৮ শতাংশ ও তাঁর স্ত্রীর নামে ৩০৫ শতাংশ জমি আছে। আর স্ত্রীর নামে আছে একটি চারতলা বাড়ি। হাসান উদ্দিনের ঋণ রয়েছে ২৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

হাসান উদ্দিনের বার্ষিক আয়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাওয়া ভাতার ১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকাও অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া কৃষি খাত থেকে ৬৩ হাজার, বাড়িভাড়া বাবদ ৫ লাখ ২২ হাজার ৯০০, ব্যবসা থেকে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ও ব্যাংক সুদ বাবদ ১১ হাজার ৫২৬ টাকা আয় আছে তাঁর।

ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ফজলুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা দাওরায়ে হাদিস। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁর বার্ষিক আয় ৮ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকা।

জাসদের প্রার্থী রাশেদুল হাসান রানার বিরুদ্ধে মামলা নেই। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। তাঁর হাতে আছে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। ব্যাংকে আছে দুই হাজার টাকা।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. নাসির উদ্দিন কামিল পাস। পেশায় শিক্ষক। তাঁর বার্ষিক আয় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। তাঁর হাতে ৩৮ হাজার ২৮০, ব্যাংকে ৬ লাখ ২১ হাজার ৭২০ টাকা আছে। ১৬৫ শতাংশ অকৃষিজমি আছে তাঁর।

স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম সানাউল্লাহ কামিল পাস। পেশায় তিনি শিক্ষক। তাঁর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা বিচারাধীন। তাঁর বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৯ লাখ টাকা।

আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ পাস। তিনি চাকরিজীবী। বার্ষিক আয় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।

সিপিবির প্রার্থী কাজী মো. রুহুল আমিন স্নাতক পাস। তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা আছে। তিনি ব্যবসায়ী। বার্ষিক আয় ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীদের হলফনামা লিফলেট আকারে ছাপিয়ে ভোটারদের হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে। কোনো প্রার্থী ভুল তথ্য দিলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।