মালিক সতর্ক হলে চালক ভালো হবে

বেশ কিছুদিন যাবৎ সংবাদমাধ্যমে গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানির খবর পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ গত রোববার উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন তুরাগ পরিবহনের চালক ও তাঁর সহকারী। ওই ছাত্রী কৌশলে সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হন। পরে তুরাগ পরিবহনের ৩৫টি বাস আটকে রেখে প্রতিবাদ করেন উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শেষ পর্যন্ত যৌন হয়রানির চেষ্টার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গণপরিবহনে যৌন হয়রানি ঠেকাতে কী করা যায়—পাঠকদের উদ্দেশে এ রকম একটি পোস্ট দেওয়া হয় প্রথম আলোর ফেসবুকের পক্ষ থেকে। পাঠকেরা সেখানে নানা মতামত দেন।

আঁখি রিমা লিখেছেন, ‘বিষয়টি প্রথমে বাসের মালিককে চিহ্নিত করতে হবে। তারপর বাসের মালিকেরা নির্ধারিত চালক আর হেলপার ঠিক করবেন। আর তাদের পুরো জীবনবৃত্তান্ত জাতীয় পরিচরপত্র দেখে জেনে নেবেন। যে মেয়ে যখন যে বাসে থাকবে, তার পুরো দায়িত্ব চালক আর হেলপারদের নিতে হবে। বাসে কোনো মেয়ের কোনো প্রকার কিছু হলে পুরো দায়ভার তাদের নিতে হব। আমরা সাধারণ মানুষ এত কিছু করতে পারব না। সরকারকে এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। আর এ বিশাল দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।’

সুদীপ্ত কুমার নাগ মনে করেন, এ জন্য সবার আগে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। তিনি লিখেছেন, ‘মনমানসিকতার পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে পরিবার, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা এবং পরিবেশ। এরপরে উচিত হবে কঠোর আইন ও তার বাস্তবায়ন।’ এ ছাড়া সকল যানবাহনে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা যুক্ত করারও প্রস্তাব দেন তিনি।

ওসমান বিন আতিক বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, এখন পর্যন্ত যা যা ঘটনা হয়েছে, সবগুলোর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বাসের চালক ও সহকারীদের বোঝাতে হবে এবং আইন ও শাস্তি বিষয়ে সবার সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

সাইফুল ইসলাম লিখেছেন, ‘যে পরিবহনে যৌন হয়রানি করা হবে, সে পরিবহন নিষিদ্ধ করতে হবে। এতে পরিবহন মালিকেরা সতর্ক হবেন। তাঁরা সতর্ক হলেই ড্রাইভার ভালো হয়ে যাবে।’

আরিফ বিল্লাহ একাধিক প্রস্তাব দিয়েছেন, তিনি লিখেছেন, ‘সর্বপ্রথম আইনের বাস্তবায়ন করতে হবে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অতি দ্রুত আসামিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে; কাউন্সেলিং দরকার, সেটার খুব অভাব। বাস মালিকেরাও এর দায় এড়াতে পারে না, সে জন্য বাস মালিকদের ওপর সরকার থেকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ বাস মালিকেরা ভয়ে থাকলে তারা এ বিষয়ে চালক ও সহকারীদের হুঁশিয়ার করবে।’

খন্দকার সাইফুল মনে করেন, ‘ড্রাইভার, হেলপারদের যোগ্যতা কী হবে, তা নির্ধারণ করতে হবে, গরু, ছাগল চিনলেই লাইসেন্স পেতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা, আগের অপরাধগুলোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে করে এই অপরাধ করার আগে নিজের পরিণতি সম্পর্কে ১০ বার ভাবতে হয়।’

পুরো ব্যবস্থাকে ঠিক করতে হবে—এমনটাই মনে করেন আশিস কুমার। তিনি লিখেছেন, ‘সঠিক বিচার হলেই, এই ধরনের অপরাধ কমবে। ঢাকায় লোকাল বাস সার্ভিসের অর্ধেক ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই, কিন্তু তারা পুলিশকে টাকা দিয়ে দিব্যি গাড়ি চালাচ্ছে। এদিকটাও খেয়াল রাখা উচিত। লাইসেন্স ছাড়া কোনো ড্রাইভার গাড়ি চালাতে পারবে না, প্রত্যেক ড্রাইভার ও হেলপারের আইডি কার্ড ব্যবহার করতে হবে।’

জাহাঙ্গীর অরুণ মনে করেন, চালকসহ অন্যদের নীতিমালা ও নৈতিকতা বিষয়ে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। মো. রায়হান বিন রউফ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটা বাস ও ট্রাকডিপোগুলো মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নিজ চোখে দেখতে হলে মহাখালী, গাজীপুর ও গাবতলীর বাসডিপোগুলো পরিদর্শন করে আসতে পারেন। আর এই মাদকই পরিবহনশ্রমিকদের বিভিন্ন খারাপ কাজে যুক্ত হওয়ার প্রধান কারণ বলে আমি মনে করি। তাই প্রতিটা বাসডিপো মাদকমুক্ত করা উচিত।’

মোহাম্মদ রবিউল মনে করেন, মানবতার মুক্তি না হলে অপরাধ বন্ধ হয় না। তিনি মূল্যবোধ ও মানবতার শিক্ষার ওপর জোর দেন। মো. আবু মুসা মনে করেন, সব বাসে সিসি ক্যামেরা লাগানো উচিত। তিনি বলেন, ‘পাবলিক প্লেসগুলো নজরদারির আওতায় আনলে কারও প্রাইভেসি ক্ষুণ্ন হওয়ার প্রশ্ন আসে না। যেকোনো অন্যায় কাজ সংঘটিত হলে ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’ তাঁর অভিমত, যানবাহনে এ ধরনের নৈরাজ্যে মূল সমস্যা পরিবহন মালিকদের। কেননা, তাঁরাই এসব কাজে নীরব সমর্থন দেন।