হাতিরঝিলে স্থায়ী রেস্তোরাঁ উচ্ছেদে উদ্যোগ নেই

হাতিরঝিলে রেস্তোরাঁ। ফাইল ছবি
হাতিরঝিলে রেস্তোরাঁ। ফাইল ছবি

হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ রক্ষায় সেখানে গড়ে ওঠা স্থায়ী রেস্তোরাঁগুলো উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তবে বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রকল্পের এক সমন্বয় সভায় ঝিলের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠা স্থায়ী রেস্তোরাঁগুলো উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রকল্প পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য গঠিত কমিটিকে রাজউক চেয়ারম্যান প্রথমে একটি জরিপের ভিত্তিতে স্থায়ী স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে কী ব্যত্যয় ঘটেছে, এগুলো কীভাবে উচ্ছেদ করা হবে, বিকল্প হিসেবে ভ্রাম্যমাণ কোনো খাবারের দোকান থাকবে কি না—এসব উল্লেখ করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ওই সমন্বয় সভার পর আড়াই মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র একটি সভা করা ছাড়া আর কোনো কাজ করেননি উচ্ছেদসংক্রান্ত কমিটির সদস্যরা। এই কমিটির সদস্য এবং প্রকল্পের রাজউক অংশের পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়ার গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে একটা সভা আমরা করেছি। পরে আবার বসার কথা থাকলেও নানা কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।’ ওই সভায় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থায়ী স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করার জন্য প্রাথমিক জরিপ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা শুরু হয়নি বলে জানান তিনি।

হাতিরঝিলের মূল নকশায় প্রকল্প এলাকায় দোকান বরাদ্দের উল্লেখ ছিল না। পরে আগত দর্শনার্থীদের কথা বিবেচনা করে প্রাথমিকভাবে কিছু ভ্রাম্যমাণ দোকান বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু এরপর সিদ্ধান্তের বাইরে বেশ কিছু স্থায়ী দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়।

ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি দোকানগুলোর কারণে হাতিরঝিলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সার্বিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন। রাজউক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন হাতিরঝিল প্রকল্পের নিসর্গ ও স্থাপত্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল হাবিব। গতকাল প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এই আড়াই মাসে কমিটি আসলে কিছুই করেনি। বিলম্ব দেখে প্রকল্পের উপদেষ্টা এবং পরামর্শকদের উদ্যোগে তৈরি করা একটা প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আমরা রাজউক চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। ’

 হাতিরঝিল প্রকল্পের মূল পরিকল্পনাকারী  বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, সবকিছু নষ্ট হওয়ার আগে ঝিলের মধ্যে ও তীর ঘেঁষে গড়ে তোলা স্থাপনাগুলো দ্রুত উচ্ছেদ করা উচিত। তাতে বাহ্যিক পরিবেশটা অন্তত ভালো থাকবে।’

 গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় ‘হাতিরঝিলে খোলা পায়খানা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, হাতিরঝিলের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ ও স্থায়ী মিলে ২৯টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী দোকান ১১টি। যার দুটি আবার ঝিলের মধ্যে।