৮৩ কারাবন্দীকে বাংলাদেশি দাবি মিয়ানমারের

>
  • বাংলাদেশের কারাগারে মিয়ানমারের ১৫০ বন্দী রয়েছেন।
  • তাঁদের ফিরিয়ে নিতে আগ্রহ নেই দেশটির।

মিয়ানমারের কারাগারে আটক ৮৩ জন কারাবন্দীকে বাংলাদেশি দাবি করে দ্রুত ফেরত নিতে সরকারকে চাপ দিচ্ছে মিয়ানমার। মিয়ানমার এই কারাবন্দীদের নাম-পরিচয় যাচাইয়ের জন্য সময় দিতে চায় না এবং তাঁদের সীমান্ত এলাকা দিয়েও প্রত্যাবাসনে আগ্রহী নয়। এই কারাবন্দীদের ‘বাড়তি বোঝা’ উল্লেখ করে দ্রুত বিমানে করে তাঁদের ফিরিয়ে নিতে বলেছে দেশটি।

মিয়ানমারের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এমন আচরণকে ঔদ্ধত্যমূলক ও সুপ্রতিবেশীসুলভ নয় বলে মন্তব্য করেছেন। কর্মকর্তাদের মতে, মিয়ানমারের প্রায় দেড় শ বন্দী বাংলাদেশের কারাগারে রয়েছেন। তাঁদেরও দ্রুত ফিরিয়ে নিতে বলবে দেশটি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, এই ৮৩ জন কারাবন্দীকে ফেরত নিতে মিয়ানমার গত মার্চ ও এপ্রিলে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে। তবে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাঁদের ফেরত আনার ব্যাপারে আগ্রহী বাংলাদেশ। তবে মিয়ানমার চায় বিমানে করে তাঁদের ফেরত আনা হোক। প্রসঙ্গত, ১৯৮০ সালের সীমান্ত চুক্তির কারণে দুই দেশ ভুলবশত অনুপ্রবেশকারীদের বিভিন্ন সময়ে হস্তান্তর করে থাকে।

মিয়ানমার চিঠিতে জানিয়েছে, কারাগারে থাকা বাংলাদেশিরা মুক্তি পেলেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ইয়াঙ্গুনে স্থানান্তর করা হবে। এতে আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা করা মিয়ানমারের জন্য বাড়তি বোঝা। একই সঙ্গে ইয়াঙ্গুন থেকে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশিদের বিমানে ফিরিয়ে দিতে ইয়াঙ্গুন হাইকমিশনের সামর্থ্য নেই। তাদের বাজেট অপর্যাপ্ত।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব চিঠি পাওয়ার পর তাঁরাও বৈঠক করেছেন। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মিয়ানমারের কারাগারে আটক ৮৩ বাংলাদেশি নাগরিকের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬২ জনের পূর্বপরিচয় পাঠিয়েছে মিয়ানমার। কিন্তু মাত্র ৫ জনের প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। অন্যদের পরিচয় মেলেনি। পরিচয় যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাঁদের দ্রুত ও জরুরি ভিত্তিতে ফিরিয়ে নিতে বলছে মিয়ানমার।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিয়ানমারের এ ধরনের তাগাদা চিঠি আমাদের অবাক করেছে। মিয়ানমারের অনেক বন্দী বাংলাদেশের কারাগারে রয়েছে, অন্যদিকে তাদের দেশের নাগরিক প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আমরা বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছি। এ ছাড়া মিয়ানমারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে আমরা তাদের অনেক নাগরিককে ক্ষমাও করেছি। তাই তাদের বন্ধুসুলভ আচরণ করা উচিত।’

এদিকে মিয়ানমারের বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁদের ক্রমাগত চাপ দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশি কারাবন্দীদের ফেরত নেওয়ার জন্য। অথচ তাদের বন্দীদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ নেই।

এর আগে ২০১৬ সালে মিয়ানমারের কারাগারে সাজা ভোগ শেষে দেশে ফেরেন ৩ জন বাংলাদেশি। তাঁরা মানব পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাচ্ছিলেন। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষÿবাংলাদেশি ৩ জন বন্দীর একটি তালিকা বিজিবির কাছে পাঠায়। তালিকাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর যাচাই-বাছাই করে ওই তিনজনকে দেশে ফেরত আনার অনুমতি দেওয়া হয়। একই বছর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মিয়ানমারের ৯২ জেলেকে আটক করা হয়। ১২টি মাছধরার নৌকা থেকে আটক ওই জেলেদের বিষয়টি ঢাকায় মিয়ানমার হাইকমিশনকে জানানো হয়। তখন মিয়ানমারের হাইকমিশন আটক জেলেদের ছেড়ে দিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানায়। পরে ৯২ জন জেলেকে ক্ষমা করে দেয় বাংলাদেশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমারের কারাগারে যাঁরা আছেন, তাঁরা যদি বাংলাদেশি হন তবে তাঁদের জেল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে গিয়ে অনেক সময় ট্রলার ডুবে যায়। এরপর ভাসতে ভাসতে মিয়ানমার জলসীমার কাছে গেলে তাঁদের উদ্ধার করে সাজা দেওয়া হয়।

ওই কর্মকর্তা বলেন, এর আগে এক বাংলাদেশি মিয়ানমারের কারাগারে সাড়ে চার বছরের বেশি সাজা খেটেছেন। পরে বিজিবি ও মিয়ানমারের জাতীয় অভিবাসন সংস্থার মধ্যে গত বছরের পতাকা বৈঠকের পর তাঁকে ফেরত দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তি দেশে ফিরে মিয়ানমারের কারাগারে নির্যাতিত
হওয়ার অভিযোগ করেন।

অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, যারা আটক হয় তাদের নাম ও পরিচয় বাংলাদেশের কাছে পাঠায় মিয়ানমার। পরে যাচাই-বাছাই করে তাদের ফেরত আনা হয়। কিন্তু এবার মিয়ানমারের চাপাচাপি উদ্দেশ্যমূলক মনে হচ্ছে।