মাদক নিয়ন্ত্রণের ৭২ কর্মকর্তাকে শাস্তি

মাদক নির্মূল করার দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরাই ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। গত এক বছরে এসব অভিযোগে ৭২ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ ছাড়া ৯০ জনের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রসচিবের বৈঠকে মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের বিষয় উঠে আসে। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী মাদক কর্মকর্তাদের কাজ মূল্যায়ন করতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৯০ জন কর্মকর্তার ঘুষ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে ব্যাখ্যা তলব করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মাদক জব্দ করে তা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অনেকে নিজের কাছে রেখে দেন। অর্থের বিনিময়ে নষ্ট করছেন মামলায় ব্যবহার করা যায় এমন আলামতও। তাঁদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী ও পৃষ্ঠপোষকদের সহযোগিতা করার অভিযোগও রয়েছে।

গত এক বছরে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৭২ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তি ও তিরস্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অনিয়মের রকমফের আছে। এঁদের মধ্যে ৩২ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা শুরু হয়েছে। ১৬টি মামলা চলমান আছে। আর বরখাস্তসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ২৪ জনের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, একজনের বিরুদ্ধে তো ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। আবার কাউকে তিরস্কার, কাউকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নিজের সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ মাদকে জড়ালে চাকরি থাকবে না বলে জানান তিনি।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, অধিদপ্তর থেকে যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন পরিদর্শক কামনাশীষ সরকার। তিনি কিশোরগঞ্জের ভৈরব সার্কেল অফিসে মাদক মজুত রেখেছিলেন, যার কোনো তালিকা নেই এবং মামলা করা হয়নি। কামনাশীষ সরকারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলার অস্থায়ী টেকনাফ সার্কেলের পরিদর্শক তপন কান্তি শর্মার বিরুদ্ধে আলামত গায়েব করার অভিযোগ রয়েছে। সেখানকার কার্যালয়ে ১ লাখ ৮১ হাজার ৯১৩ ইয়াবা বড়ি ছিল।

বরিশালের গৌরনদী সার্কেলের সিপাহি নুরুজ্জামান বেল্লালের বিরুদ্ধে এলাকার নিরীহ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে ঘুষ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নেন। তাঁর সঙ্গে সিপাহি জিয়াউল হক জড়িত রয়েছেন।

যশোর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল কবিরকে ২ লাখ টাকা ঘুষসহ গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। রক্ষক যখন ভক্ষক হয়ে যায়, তখন আমাদের দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই থাকে না। আমরা মাদক কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

আরও পড়ুন...