প্লাস্টিকের উৎপাদন, বাজারজাত ও ব্যবহার রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগের দাবি টিআইবির

টিআইবি
টিআইবি

পরিবেশদূষণ রোধে প্লাস্টিকের বেআইনি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহার রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে টিআইবি। আজ সোমবার এক বিবৃতিতে পরিবেশদূষণ রোধে ব্যবহৃত তহবিলসহ জলবায়ু অর্থায়নে পরিচালিত সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতার চর্চা ও জন-অংশগ্রহণ বৃদ্ধির দাবিসহ আট দফা দাবি দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৮-এর মূল প্রতিপাদ্য ‘আসুন, প্লাস্টিকদূষণ বন্ধ করি, প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করি, না পারলে বর্জন করি’। আর এ উপলক্ষেই এ বিবৃতি দিল টিআইবি।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে দেওয়া বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ এরই মধ্যে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক কারণগুলোর পাশাপাশি, দেশের ভেতরে অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০০২ সালে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করা হলেও, কার্যকর প্রয়োগের অভাবে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই যত্রতত্র নির্বিচারে পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে এবং প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য নদী-নালা, খাল-বিল ও উন্মুক্ত জায়গায় ফেলা হচ্ছে। এ ধরনের দূষণ বন্ধ করতে হলে প্লাস্টিকের বেআইনি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। তিনি মনে করেন, আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে প্লাস্টিকের অবৈধ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি, দূষণ-কর ব্যবস্থাও চালু করা যেতে পারে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নসহ প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্য প্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা। এ ছাড়া ‘প্যারিস চুক্তি’ অনুযায়ী বাংলাদেশও পরিবেশ, বনভূমি এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ সব ধরনের অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রম নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

‘প্যারিস চুক্তি’ অনুযায়ী বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য প্রতিশ্রুত তহবিল, স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত ও সহজতর পদ্ধতিতে ছাড় করানোর জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানান ইফতেখারুজ্জামান। পাশাপাশি, পরিবেশদূষণ রোধে ব্যবহৃত তহবিলসহ সার্বিকভাবে জলবায়ু অর্থায়নে পরিচালিত কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে টিআইবি। তিনি বলেন, এসব কার্যক্রমে জন-অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে এবং আর্থিক লেনদেন ও কর্মসম্পাদন প্রতিবেদন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে প্রকাশ করতে হবে।

দিবসটি উদ্‌যাপন উপলক্ষে টিআইবি প্রচার কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী মানববন্ধন ও র‌্যালি, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে টিআইবি সুনির্দিষ্ট আটটি দাবি উত্থাপন করছে।
দাবিগুলো হলো

১. প্লাস্টিকের বেআইনি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহার রোধে দূষণ কর প্রয়োগ, বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ, প্রয়োজনে বিদ্যমান আইন সংস্কার করে শাস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং তার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অনুকরণযোগ্য ইতিবাচক অবদানের জন্য পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

২. প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সব অংশীজনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কমিউনিটিভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

৩. প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করে উৎপাদিত প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার নিশ্চিতে সরকার ও বেসরকারি খাত কর্তৃক বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

৪. সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলোতে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ/সীমিত করতে হবে এবং প্লাস্টিকের পরিবেশবান্ধব বিকল্প উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা করতে হবে।

৫. সমুদ্রসম্পদ, বনভূমি, নদ-নদী, খাল-বিল রক্ষা এবং অবৈধ দখল হতে তা উদ্ধার ও সুরক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

৬. টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৪-এর অর্জন নিশ্চিতে সমুদ্রদূষণ রোধের পাশাপাশি সমুদ্রসম্পদের সংরক্ষণ নিশ্চিতে সমুদ্র অধিদপ্তর, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত তদারকি এবং দূষণ আইনের ব্যবহারে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহায়তা নিতে হবে।

৭. ‘প্যারিস চুক্তি’ বাস্তবায়নে সকল শিল্পোন্নত দেশের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে, বিশেষ করে স্বচ্ছতার সঙ্গে বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য প্রতিশ্রুত তহবিল দ্রুত ও সহজতর পদ্ধতিতে ছাড় করতে হবে।

৮. দূষণ রোধে ব্যবহৃত তহবিলসহ সার্বিকভাবে জলবায়ু অর্থায়নে কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিতে গৃহীত সব কার্যক্রমে জন-অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে এবং আর্থিক লেনদেন ও কর্মসম্পাদন প্রতিবেদন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে প্রকাশ করতে হবে।