বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তিতে ভারত থেকে আনা হবে চন্দনকে

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের (গাইবান্ধা-১) সাংসদ মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যার পলাতক আসামি চন্দন কুমার সরকারকে বাংলাদেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, সেই চুক্তির আওতায় ফেরত আনা হবে। চন্দনকে ফেরত আনার ব্যাপারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে সরকার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তাদের কাছে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় সংশ্লিষ্ট সব নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ-সংক্রান্ত চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইতিমধ্যে তাঁরা ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন।

২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জের নিজ বাড়িতে এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি চন্দন সরকারকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। চন্দন ভারতের পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। চন্দন উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। গত বছর আগস্টে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের দায়ে চন্দনকে ভারতের পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী সাংসদ মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যার আসামিকে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিশেষভাবে নির্দেশ দেন।

এর আগে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাইবান্ধায় সাংসদ লিটন হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন, নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে এভাবে হত্যা করা, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর আমরা বিষয়টি “প্রায়োরিটি” (প্রাধান্যের) ভিত্তিতে দেখছি। কোন প্রক্রিয়ায় আনতে পারব, তা এখনো ঠিক করতে পারিনি। তবে দ্রুত এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাব—এটা আমরা অঙ্গীকার করেছি।’

এদিকে ঘটনায় দেড় বছর অতিবাহিত হলেও এখনো বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন মামলার বাদীসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা। সাংসদের পরিবার-পরিজন, দলীয় নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক এখনো কাটছে না। এ আসনে এক বছরের ব্যবধানে দুই সাংসদের মৃত্যু, সাবেক এক সাংসদের কারাভোগ ও আরেক সাবেক সাংসদ পলাতক থাকায় এ আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে।

জানতে চাইলে সাংসদ মনজুরুল ইসলামের স্ত্রী খুরশিদ জাহান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি তাঁর স্বামী হত্যার বিচার দেখতে চান। তাঁরা তাঁদের নিরাপত্তা চান। চন্দনসহ সব আসামিকে যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়, সে জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন।

সাংসদ মনজুরুল ইসলাম নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় তাঁর ছোট বোন ফাহমিদা বুলবুল অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন। শুরুতে জামায়াত-শিবিরের ওপর এর দায় চাপানো হয়। শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড়। পরে ছিনতাইকারীদের ফেলে যাওয়া একটি ম্যাগাজিনের সূত্র ধরে হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করার কথা জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ কাদের খানকে। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গ্রামের বাড়ি থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় তাঁর সহযোগীদের। তাঁরা হলেন কাদের খানের বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শাহিন মিয়া, মেহেদী হাসান, রানা মিয়া, গাড়িচালক আবদুল হান্নান, তাঁর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) জোহা মিয়া ও সুবল চন্দ্র। বর্তমানে চন্দন সরকার ছাড়া সব আসামি কারাগারে রয়েছেন। তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় কাদের খানের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করে পুলিশ। বর্তমানে অস্ত্র মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, লিটন হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ গত ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে। ওই দিন মামলার বাদী ফাহমিদা বুলবুলের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এ সময় মামলার প্রধান আসামি কর্নেল (অব.) আবদুল কাদের খানসহ অন্য আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। গত ২ মে পর্যন্ত মোট সাতজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ২৪ জুন মামলার পরবর্তী তারিখে সাংসদ মনজুরুলের স্ত্রী খুরশিদ জাহানসহ তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।