আজ শোক ও গৌরবের অমর একুশে

শোকে বিহ্বল, গৌরবে দীপ্ত এক অনন্য দিন আজ বাঙালির জীবনে। মানব ইতিহাসের দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় প্রথমবার মানুষ মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষায় বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রাজপথে। সেই মানুষের পরিচয় বাঙালি।
আজ থেকে ৬২ বছর আগের এই দিনটি ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। ঢাকার রাজপথ হয়ে উঠেছিল উত্তাল। পাকিস্তানি শাসকদের হুমকি-ধমকি, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভেঙে মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে পথে নেমে এসেছে ছাত্র, শিক্ষক, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী অসংখ্য মানুষ। বসন্তের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তারা বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছে, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। পলাশে-শিমুলে রক্তিম হয়ে আছে বাংলার দিগন্ত। গুলি চালানো হলো মিছিলে। সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ বাংলা মায়ের অকুতোভয় সন্তানদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হলো দেশের মাটি। এক অভূতপূর্ব অধ্যায় সংযোজিত হলো মানব ইতিহাসে। অমর একুশের পথ ধরেই উন্মেষ ঘটেছিল বাঙালির স্বাধিকার চেতনার। সেই আন্দোলনের সফল পরিণতি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন। ভাষার জন্য বাঙালির এই আত্মদানের দিনটিকে ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। বাঙালির সঙ্গে সারা বিশ্ববাসী আজ দিনটি পালন করবে মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও গৌরব বুকে নিয়ে।
বরাবরের মতোই এবারও গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে সর্বস্তরের বাঙালির। বিকেল থেকেই দোয়েল চত্বর, চানখাঁরপুল, টিএসসি, পলাশী মোড় থেকে শহীদ মিনারগামী পথগুলোয় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পথে পথে ঐতিহ্যবাহী আলপনা আঁকতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নবীন আঁকিয়েরা।
আজ ভোর থেকে সারা দিন কেউ মালা হাতে, কেউ সুদৃশ্য পুষ্পস্তবক নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবেন শহীদ মিনারের দিকে। থাকবে কালো ব্যানার, কালো ব্যাজ। নগ্ন পায়ে উঠবেন শহীদ মিনারের বেদিতে। কণ্ঠে থাকবে সেই চিরচেনা গান ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি...।’ শহীদ মিনার থেকে অনেকেই যাবেন আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করতে।
আজ সরকারি ছুটির দিন। ঢাকার মতো দেশের সর্বত্রই আজ সকালে প্রভাতফেরি করে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হবে শহীদদের স্মৃতির প্রতি। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে থাকবে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঢাকায় প্রথম আলোর আয়োজনে দিনভর বর্ণমেলা হবে ধানমন্ডির সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে।
বাণী: অমর একুশে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি এখন বিশ্বের সব ভাষাভাষীর প্রেরণার উৎসব। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে সব ভেদাভেদ ভুলে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতা তাঁর বাণীতে বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাণীতে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘একুশের অম্লান চেতনা সব ষড়যন্ত্রকারী আধিপত্যবাদী শক্তিকে রুখতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে।’