'হাতপাখায়' বিএনপিতে অস্বস্তি

ওবায়দুর রহমান
ওবায়দুর রহমান
>
  • এবারই প্রথম বরিশালে মেয়র প্রার্থী দিল ইসলামী আন্দোলন।
  • দলটির নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে বরিশালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবারই প্রথম মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে দলটি। তাদের প্রার্থী ওবায়দুর রহমান হেফাজতে ইসলামের বরিশাল মহানগরের আমিরের দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৩ সালে। ফলে হেফাজতের ভোটও তাঁর পক্ষে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ভোটের এই হিসাব সমস্যায় ফেলতে পারে বিএনপির প্রার্থীকে।

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনে (সিটি করপোরেশন এলাকা ও সদর উপজেলা) ২৭ হাজার ১৫৬ ভোট পায় ইসলামী আন্দোলন।

বরিশাল বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ইসলামী আন্দোলনের ভোট তাঁদের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে ইসলামী জাতীয়তাবাদ-সমর্থিত ভোট ধরে রাখতেই খেলাফত মজলিশের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো হয়েছে। হাতপাখা (ইসলামী আন্দোলনের প্রতীক) নির্বাচন না করলে ওই ভোটগুলো বিএনপি পেত।

বিএনপির নেতারা বলছেন, গত মেয়র নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন এবং হেফাজতের ভোটের বড় অংশ তাঁদের পক্ষে ছিল। এবার এই সুবিধা পাওয়া যাবে না। এর সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে। এ অবস্থায় দলকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। শেষ পর্যন্ত সব নেতা মাঠে নামলেও মনোনয়নবঞ্চিত তিন নেতার ভূমিকা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।

বিএনপির সমর্থনে নির্বাচিত বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেননি এমন আলোচনা নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে। এবার তাঁকে মনোনয়ন না দেওয়ার বড় কারণও এটি। তাঁর পরিবর্তে প্রার্থী করা হয়েছে বরিশালের প্রথম নির্বাচিত মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারকে। কামালের অনুসারীরা এটি মেনে নিতে পারছেন না। এ ছাড়া বরিশাল জেলা দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম তসলিম উদ্দিনের বড় ভাই ইকবাল হোসেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে বিএনপির কিছু ভোট জাতীয় পার্টির প্রার্থী পেতে পারেন। সব মিলিয়ে বিএনপির ভোট কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন নেতারা।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ওবায়দুর রহমান ২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনি বরিশালের সবচেয়ে বড় কওমি মাদ্রাসা জামিয়া মাহমুদিয়ার অধ্যক্ষ। সম্প্রতি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গিয়ে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি।

ইসলামী আন্দোলনের বরিশাল মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া হামিদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো দলের ক্ষতি করতে আমরা নির্বাচনে নামি নাই, জয়ের জন্যই নেমেছি। প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ঢাকা, গাজীপুর, খুলনা সিটি নির্বাচনে ভালো ভোট পেয়েছে হাতপাখা। বরিশাল তো পীরসাহেবের (চরমোনাই) নিজ এলাকা। এর সঙ্গে হেফাজতের সমর্থন আমাদের এগিয়ে দিবে।’

তবে বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক বলেন, তারা (ইসলামী আন্দোলন) সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময়েও বিএনপি জয়ী হয়েছে। শহরে তারা তেমন ভোট পাবে না। চরমোনাই পীরের সব মুরিদ তো তাদের ভোট দেবে না।

ইসলামী আন্দোলনের ভোট বিএনপির জন্য সমস্যা হবে বলে মনে করেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী দেওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে বিএনপি। এতে বিএনপির ভোট ভাগাভাগি হবে। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থিতা নিয়ে আওয়ামী লীগের ভোটের হিসাবে কোনো সমস্যা হবে না বলে দাবি করেন তিনি।

২০১৫ সালে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অংশ নেয় ইসলামী আন্দোলন। পরে খুলনা এবং গাজীপুর নির্বাচনেও দলের মেয়র প্রার্থী ছিল। চার সিটি নির্বাচনেই তৃতীয় অবস্থানে ছিল তাদের প্রার্থী। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ১৮ হাজার, দক্ষিণে ১৫ হাজার, খুলনায় ১৪ হাজার ও গাজীপুরে ২৬ হাজার ভোট পেয়েছে দলটি।