বাংলা ভাষার জয়গান

চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে গতকাল সকালে প্রথম আলো আয়োজিত বর্ণমেলায় শিশু-কিশোরেরা চিত্রাঙ্কনে ব্যস্ত । ছবি: জুয়েল শীল
চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে গতকাল সকালে প্রথম আলো আয়োজিত বর্ণমেলায় শিশু-কিশোরেরা চিত্রাঙ্কনে ব্যস্ত । ছবি: জুয়েল শীল

‘মা দেখ দেখ কত্ত বড় ক! ওই তো আ, ওই তো...’ মাঠে ঢুকেই বিশাল আকৃতির নানা রঙের বর্ণ দেখে শিশু শ্রেণীতে পড়ুয়া মাইশা মায়ের কাছে বিস্ময় প্রকাশ করল এভাবে।
হাজারও বর্ণে ঢেকে গিয়েছিল মাঠ, মঞ্চ, গাছ, দোকান। শুধু কি তাই, বর্ণ উড়েছে আকাশে, বর্ণ লেগেছে শিশু-কিশোরদের কপালে। আর বর্ণ ফুটেছে মুখে মুখে। এমন না হলে কি আর বর্ণমেলা!
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বর্ণমেলার এই আসরটি বসেছিল চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে। প্রথম আলো আয়োজিত এই মেলায় দিনভর বর্ণ প্রদর্শনী, বর্ণ নিয়ে নানা প্রতিযোগিতা, গান, নাচ, জাদু, নাটক ইত্যাদিতে মেতেছিল শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধ বনিতারাও। বর্ণ নিয়ে খেলতে খেলতে আগামী প্রজন্ম শপথ নিয়েছে দেশপ্রেমের। জয়গান করেছে বাংলা ভাষার।
গতকাল শুক্রবার সকালে শিশুদের নিয়ে বর্ণখচিত বেলুন উড়িয়ে বর্ণমেলার উদ্বোধন করেন কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন। এ সময় বর্ণমঞ্চে সমবেত কণ্ঠে রক্তকরবীর শিল্পীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। আবুল মোমেন বলেন, ‘দেশকে ভালোবাসতে হবে। বাংলাভাষাকে ভালোবাসতে হবে।’
দিনব্যাপী মেলায় শিশুদের রং-তুলিতে শহীদ মিনার, লাল-সবুজ পতাকা, ভাষা আন্দোলনের চিত্র উঠে আসে।
মেলায় ছিল বর্ণভোজ, বর্ণে পোশাক, বর্ণ পণ্ডিত, বর্ণে স্বাস্থ্যাভ্যাস, বর্ণে বইঘর, বর্ণে ডাকটিকিট, বই বর্ণালি, বর্ণছায়া নামে দোকান। নাগরদোলার নাম পাল্টে হয়েছে বর্ণদোলা। বর্ণদোলায় চড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ছিল লম্বা লাইন।
লাইনে দাঁড়ানো পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র মোবাশ্বের বলে, ‘নাগরদোলায় চড়তে আমার মজা লাগে। যতক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় করব। চড়েই ছাড়ব আজ।’
বেশি ভিড় ছিল হাতেখড়ির দোকানের সামনে। সেখানে শিল্পী আবুল মনসুর, কবি আবুল মোমেন, অধ্যাপক ভূঁইয়া ইকবাল, অধ্যাপক লায়লা জামান, শিল্পী জাহেদ আলী চৌধুরী, শিল্পী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ও শিল্পী শায়লা শারমিনের মতো বিশিষ্টজনদের কাছে হাতেখড়ি নিতে ব্যস্ত ছিল খুদে শিশুর দল।
নাট্য সংগঠন ফেইমের রোমেন বড়ুয়া, শাহরিয়ার হান্নান ও সাজেদা আক্তার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি নজরুল ইসলাম ও বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সেজে ঘুরেছেন সারা মেলা। শিশুরা তিনজনের সঙ্গে ছবি তোলা, কথা বলা, অটোগ্রাফ নিতে ব্যস্ত ছিল।
রক্তকরবী ছাড়াও বৃন্দ পরিবেশনায় অংশ নেয় উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, অভ্যুদয় সংগীত ভবন, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চবিদ্যালয়, মেরন সান স্কুল, কুসুমকুমারী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও বি এন স্কুল। নাটুয়ার ‘অমর একুশে’ শীর্ষক কোরিওগ্রাফি বর্ণমেলায় আগতদের মুগ্ধ করে। আবৃত্তি দল প্রমার ‘জননী বাংলা’ শীর্ষক আবৃত্তি মন ছুঁয়ে যায় সবার। আবৃত্তি করে বোধনও। পাপেট শোয়ে ছিল বর্ণের জয়জয়কার।
একক সংগীত দিয়ে মঞ্চ মাতান রন্টি দাশ, মানস পাল, পুলক, গিরীজা রাজ ধর ও বেলী। রাজীব বসাকের জাদু মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখেছে শিশু-কিশোরেরা। এর আগে মঞ্চে উঠে মাইকে ছড়া ও কবিতা আবৃত্তি করেছে শিশুরা।
পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সায়েম ও পূজা। অনুষ্ঠানে প্রচার সহযোগী ছিল চ্যানেল নাইন। শেষে বিজয়ীদের মধ্যে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী ও উপ-ফিচার সম্পাদক জাহীদ রেজা নূর পুরস্কার বিতরণ করেন।
পুরস্কার পেল যারা: বর্ণ প্রদর্শনী প্রতিযোগিতায় ক বিভাগে শিবাশীষ কানুনগো প্রথম, রাইয়ান কবির চৌধুরী দ্বিতীয়, ইফরা তৃতীয় হয়। খ বিভাগে প্রথম রাইসা তাফান্নুম, দ্বিতীয় মাহির আসহাব নেওয়াজ ও তৃতীয় হয় সাদিয়া আফরিন। গ বিভাগে প্রথম মো. তাওহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া, দ্বিতীয় মেহেরুন নেছা জ্যোতি ও তৃতীয় হয় প্রান্তিক পাল।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ক বিভাগে প্রথম রাদিয়া নুরাইন, প্রদীপ্ত দাশ দ্বিতীয় ও আলিজা রামিন তৃতীয় হয়। খ বিভাগে তাওসিফা জারিন প্রথম, হূদিতা শীল দ্বিতীয় ও নিশাত তাসনিম তৃতীয় হয়। গ বিভাগে সেরা তিনটি পুরস্কার পায় যথাক্রমে মধুপর্ণা দে, রোহিত রুদ্র ও মুজতাহিদ আবরার সিদ্দিকী।
সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতায় ক বিভাগে তাসনিয়া হাবীব প্রথম, মাইশা নাহিয়ান দ্বিতীয় ও আয়েশা ছিদ্দিকা তৃতীয় হয়। বিশেষ পুরস্কার পায় নাফিসা জেরিন। খ বিভাগে অবনি প্রিয়া বড়ুয়া, সারাহ তারান্নুম ও তাওসিপা জারিন যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়। গ বিভাগে সৌমিক রায়, হুমায়ারা নওশীন মনসুরী ও মধুপর্ণা দে যথাক্রমে সেরা তিনটি পুরস্কার পায়।

কে কার চেয়ে সুন্দর করে লিখতে পারে, সেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত শিশু-কিশোরেরা, বর্ণমেলায় বর্ণের ক্রমবিকাশ দেখছে শিশুরা । প্রথম আলো
কে কার চেয়ে সুন্দর করে লিখতে পারে, সেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত শিশু-কিশোরেরা, বর্ণমেলায় বর্ণের ক্রমবিকাশ দেখছে শিশুরা । প্রথম আলো