আবারও বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ

রাজশাহী সিটি করপোরেশন
রাজশাহী সিটি করপোরেশন

আহমেদ জায়িফ ও আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ রাজশাহী থেকে
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আবার বিএনপির দলীয় কার্যালয় এবং দলের মেয়র পদপ্রার্থীর দুটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ অভিযোগ করে বিএনপি। একই দিন আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের হেনস্তা করা ও জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়েছেন।
বিএনপি অভিযোগ করেছে, শনিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে নগরের হাদীর মোড় খাদেমুল ইসলাম মসজিদের সামনে বিএনপির দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। এ সময় তাঁরা বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের হুমকি-ধমকিও দেন। পরে পুলিশ এসে কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেয়।

তবে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ তালা মারতে যাবে কেন? এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।
২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আক্তারুজ্জামান জানান, গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৬টায় ২৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এসে কার্যালয়ে তালা খুলে দিয়েছেন।
গতকাল রোববার বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেওয়া একটি চিঠিতে এই কার্যালয় ভাঙচুরসহ চারটি অভিযোগ করা হয়। বাকি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে শনিবার দিবাগত রাত দুইটায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা মোটরসাইকেল নিয়ে এসে বিএনপির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করেন। নগরের ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষের প্রতীকের পক্ষে প্রচারের সময় মহিলা কর্মীদের ভিডিও চিত্র ধারণ করে তাঁদের লাঞ্ছিত করা হয়। এ ছাড়া গত শনিবার বিকেলে নগরের বোসপাড়া এলাকায় বিএনপির একটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়।
বিএনপির দলীয় ও নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ডাবলু সরকার প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়টি তাঁর জানা নেই। বিষয়টি জেনে পরে তিনি জানাবেন। পরবর্তী সময়ে তাঁকে আর টেলিফোনে পাওয়া যায়নি।
বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগগুলোর বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তিনি গতকাল পর্যন্ত কোনো সাড়া পাননি।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে বিএনপি তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের হেনস্তা করা হচ্ছে বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছিল। এবার গতকাল পুলিশের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী। তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে বলেছেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্মীদের বাড়িতে পুলিশ গত শনিবার রাতে হানা দেয়। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এতে কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে কোন নেতা-কর্মীর বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে, তা উল্লেখ করেননি তিনি।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম প্রথম আলোকে বলেন, খায়রুজ্জামান লিটনের এ অভিযোগের বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখবেন।
গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৃথক অভিযোগে খায়রুজ্জামান রাজশাহী জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের কর্মীরা দলীয় পরিচয় দিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি সাক্ষাৎ দিতে অস্বীকৃতি জানান। অন্যদিকে বিএনপির কর্মীরা গেলে তিনি সাক্ষাৎ দিচ্ছেন। এ আচরণ পক্ষপাতমূলক বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা প্রশাসক এস এম আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, সভা বা গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকার সময় কেউ ফিরে গেছেন কি না, তাঁর জানা নেই। আইনের ভেতর থেকে যতটুকু সম্ভব তিনি সবার জন্যই করছেন।
মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামানের এ দুটি অভিযোগ ছাড়াও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী আইন সহায়তা উপকমিটির সদস্যসচিব মুসাব্বিরুল ইসলাম গতকাল আরও পাঁচটি অভিযোগ করেছেন। এগুলো সবই শনিবারের ঘটনা। তিনটি অভিযোগে নগরের বুধপাড়া, ভাড়ালিপাড়া ও ডাঁশমারি এলাকায় বিএনপি ও জামায়াত-কর্মীদের বিরুদ্ধে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার কথা বলার অভিযোগ আনা হয়েছে। একটিতে নগরের তেরখাদিয়া ডাবতলার এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অর্থের লোভ দেখানোর অভিযোগ এবং অন্যটিতে নগরের বড়কুঠি এলাকায় পোস্টার ছেঁড়ার বিষয়ে কথা বলতে গেলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা গালাগালি ও উসকানিমূলক কথা বলেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
আওয়ামী লীগের এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য সন্তোষজনক হওয়ায় অভিযোগটি নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
১০ জুলাই নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েই একে অপরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছে। এখন পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেওয়া তিনটি চিঠিতে বিএনপি ১০টি অভিযোগ এনেছে। আর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছয়টি চিঠিতে ১১টি অভিযোগ আনা হয়েছে।