চিকুনগুনিয়ায় ভুগেছে ঢাকায় ৯ লাখ মানুষ

>
  • বিএসএমএমইউর গবেষণা
  • রাজধানীর বাউনিয়ার ৪০৩ জনের ওপর গবেষণা
  • প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ গত বছর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়
  • ঢাকায় এ বছরও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য
  • জুন থেকে সেপ্টেম্বর চিকুনগুনিয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মৌসুম

ঢাকা শহরের প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ গত বছর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। সংখ্যায় এটা ৯ লাখের মতো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন, জনস্বাস্থ্য ও ভাইরোলজি বিভাগের তিনজন চিকিৎসক রাজধানীর বাউনিয়া এলাকার ৪০৩ জন মানুষের রক্ত নমুনা পরীক্ষা করে এ গবেষণা চালান। খুব শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে গবেষণার ফল প্রকাশ করা হবে।

গবেষকেরা বলছেন, ঢাকা শহরে এ বছরও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এবারও চিকুনগুনিয়ার বড় ধরনের প্রকোপ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি আছে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর চিকুনগুনিয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মৌসুম।

গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে রাঙামাটিতেও অনেকে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। জেলার সিভিল সার্জন শহীদ তালুকদার বলেন, ৩০ থেকে ৪০ জন আক্রান্ত মানুষকে জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছেন।

গত বছর ঢাকা শহরে কত মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল, তার অনুমিত সংখ্যা সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) দিতে বা বলতে পারেনি। বরং সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় যেসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল, তাতে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার পরিকল্পনার জন্য সঠিক তথ্য দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারের ঘাটতি আছে। এখন চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ার মৌসুম (জুন-সেপ্টেম্বর) শুরু হয়েছে। অথচ আমরা তথ্যশূন্যতার মধ্যে আছি।’

চিকুনগুনিয়া মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস এজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস প্রজাতির স্ত্রী মশার দ্বারা এই রোগের ভাইরাস একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষে ছড়ায়। এই মশা মানুষের ঘরে বা ঘরের আশপাশে বসবাস করে। পরিষ্কার বদ্ধ পানি এই মশার বংশবিস্তারের সহায়ক।

বিএসএমএমইউর গবেষণা
গবেষকেরা বলছেন, চিকুনগুনিয়ার ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। রক্ত পরীক্ষা করে এই অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা যায়।
বিএসএমএমইউর গবেষকেরা বাউনিয়ার ৪০৩ জন মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগে পরীক্ষা করেন। পাশাপাশি একটি প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে গবেষণায় অংশগ্রহণকারী এসব মানুষের গত বছর জ্বর হয়েছিল কি না, গিঁটে ব্যথা ছিল কি না, চিকুনগুনিয়া রোগ শনাক্ত হয়েছিল কি না-এসব তথ্য নেওয়া হয়। প্রশ্নপত্র পূরণ ও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয় এ বছরের এপ্রিল-মে মাসে।
রক্তের নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায়, এদের মধ্যে ১৯ জন অর্থাৎ ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ গত বছর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। গবেষণাটি একটি শহরের নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের ওপর করা হলেও পুরো শহরের চিত্র এর কাছাকাছিই হবে বলে মত দেন গবেষকেরা।
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ। সেই হিসাবে প্রায় ৯ লাখ মানুষ গত বছর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৮ শতাংশের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি।
প্রধান গবেষক ও বিএসএমএমইউর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানভীর ইসলাম বলেন, ‘গবেষণায় অংশ নেওয়া ৫ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, অর্থাৎ এদের আর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু শহরের ৯৫ শতাংশ মানুষের সেই আশঙ্কা আছে।’ তিনি বলেন, ঢাকা শহরের একটি এলাকার কত শতাংশ মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল, তা জানাই ছিল এই গবেষণার উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে ঢাকা শহরের পূর্ণাঙ্গ না হলেও কাছাকাছি একটি চিত্র পাওয়া যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের ছয়জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলেও তাদের জ্বর ও গিঁটে ব্যথা ছিল না। আবার ৬২ জনের জ্বর থাকলেও তাঁরা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হননি। মোহাম্মদ তানভীর ইসলাম বলেন, ‘গত বছর জ্বরে আক্রান্ত প্রায় প্রত্যেককে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ভাবা হচ্ছিল, অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়ারই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই ৬২ জন অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত ছিলেন।’

সরকারের তথ্য নেই
রোগের প্রকোপ ও প্রাদুর্ভাব নিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব আইইডিসিআরের। গত বছর কত মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল তার অনুমিত সংখ্যাও প্রতিষ্ঠানটির কাছে নেই। অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, এদের কাছে তথ্য থাকা বাঞ্ছনীয়।