১০ হাজার হজযাত্রীর প্রতিস্থাপন চায় হাব

>
  • হজযাত্রী প্রতিস্থাপন কোটা ৪ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার দাবি।
  • এখন পর্যন্ত ১০ হাজার বিমান টিকিট অবিক্রীত।
  • এবার হজে যাচ্ছেন ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন।

নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী মারা গেলে কিংবা গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁর বদলি হিসেবে অন্য কাউকে হজ করার সুবিধা দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। প্রতিবছরের মতো এবারও রিপ্লেসমেন্ট (প্রতিস্থাপন) কোটা ৪ শতাংশ রেখেছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু হজ এজেন্সিগুলোর দাবি, প্রতিস্থাপন কোটা বাড়ানো না হলে এ বছর ১০ হাজার হজযাত্রী হজে যেতে পারবেন না।
হাব (হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সূত্র বলছে, এবার হজ পরিচালনাকারী এজেন্সির সংখ্যা ৫২৮টি। অধিকাংশ এজেন্সির ৮ থেকে ১৫ জন হজযাত্রী প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন। অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে শেষ মুহূর্তে হজে যেতে পারেন না।
সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার বাংলাদেশ থেকে হজ করতে যাচ্ছেন ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন। এর মধ্যে গতকাল বুধবার পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রায় ১০ হাজার টিকিট অবিক্রীত ছিল। মোট হজযাত্রীর মধ্যে বিমানে সৌদি আরব যাচ্ছেন ৬৩ হাজার ৫৯৯ জন। বাকিরা যাবেন সৌদি এয়ারলাইনসে। এই বিমান সংস্থার কত টিকিট অবিক্রীত রয়েছে, তা বলতে চায়নি কর্তৃপক্ষ।
হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, এজেন্সিগুলো নিবন্ধিত হজযাত্রীর জন্য সৌদি আরবে বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে সব খরচ আগেই করে ফেলে। হজযাত্রী হিসেবে নিবন্ধন করার পর অনেকে মারা যান কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসব ক্ষেত্রে বদলি হজযাত্রী নেওয়ার সুযোগ না দিলে এজেন্সিগুলো নিবন্ধিত হজযাত্রীর টাকা ফেরত দিতে পারে না। হজযাত্রী, এজেন্সি সবার দিক বিবেচনা করে প্রতিস্থাপন কোটা বাড়ানো উচিত।
হজ অফিস জানায়, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সৌদি আরবে গেছেন ২০ হাজার ৯৪২ জন হজযাত্রী। বাকি আছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৮৫৬ জন।
আশকোনা হজ ক্যাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিস্থাপনের কোটা বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সেটি সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত।
অভিযোগ উঠেছে, কিছু এজেন্সি ভুয়া নাম, পাসপোর্ট ব্যবহার করে হজযাত্রী নিবন্ধন করেছিল। এখন তারা নিবন্ধিত হজযাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে কিংবা মারা গেছে জানিয়ে অন্য কাউকে হজ করার জন্য সৌদি আরবে পাঠানোর চেষ্টা করছে। আবার শেষ সময়ে হজে পাঠিয়ে কিছু এজেন্সি আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজি কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আবদুল্লাহ আল নাসের প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর ৪ শতাংশ প্রতিস্থাপন কোটা কয়েক ধাপে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। যাঁদের প্রতিস্থাপন কোটায় হজে যাওয়ার যৌক্তিক কাগজপত্র আছে, তাঁদের হজে পাঠাতে সমস্যা নেই। কিন্তু প্রতিস্থাপন কোটা বাড়ানোর সুযোগ নিয়ে কোনো অসাধু এজেন্সি যেন বাণিজ্য না করতে পারে, সেটি সরকারের খেয়াল রাখা দরকার।
হজ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে হজ কার্যালয়ের সমন্বিত ব্যবস্থা থাকলে নিবন্ধনের সময়ই জালিয়াতি ধরা পড়ত। ভুল পাসপোর্ট দিয়ে কারও নিবন্ধন করা হয়েছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো এজেন্সি ভুয়া পাসপোর্ট দিয়ে নিবন্ধন করে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভিসা না হওয়া যাত্রীও হজ ক্যাম্পে
গতকাল আশকোনা হজ ক্যাম্পে কথা হয় জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের এই বাসিন্দা জানান, গত সোমবার চুয়াডাঙ্গা থেকে একসঙ্গে তাঁরা ৩০ জন হজযাত্রী এসেছেন। আল-কাশেম ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মাধ্যমে হজে যাবেন। তবে তাঁদের ভিসা, টিকিট হয়েছে কি না, এজেন্সির লোকজন সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
আল-কাশেম ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক মো. রবিউল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর স্ত্রী রোজিনা বেগম বলেন, রবিউল ইসলাম সৌদি আরবে গেছেন। তবে তাঁদের এজেন্সির সব যাত্রীর ভিসা হয়েছে। অনেকে সৌদি আরব চলে গেছেন। অন্যরাও বৃহস্পিতিবার যাবেন।

১৪৪ এজেন্সির সঙ্গে ‘সিস্টেম জটিলতা’ হয়েছিল
নিবন্ধিত হজযাত্রীর (অন্তত ৫০ জন) টিকিট করেনি এমন ১৪৪টি হজ এজেন্সির সঙ্গে গত সোম ও মঙ্গলবার সচিবালয়ে বৈঠক করেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আনিছুর রহমান। বৈঠকে এজেন্সির মালিক ও প্রতিনিধিরা জানান, তাঁদের অধিকাংশই টিকিট কেটেছেন। ব্যাংক থেকে পে-অর্ডারের কাগজপত্র বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে না পৌঁছানোয় তথ্যবিভ্রাট হয়েছে।
এ বিষয়ে হজ পরিচালক সাইফুল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের জানান, ১৪৪টি এজেন্সির টিকিট কাটার তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে না থাকায় তাদের তলব করা হয়েছিল। এজেন্সিগুলো পে-অর্ডারের কাগজপত্র দেখিয়ে উড়োজাহাজের টিকিট করার বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করেছে।